জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী জেলা কমিটিতে আওয়ামী লীগের দোসর ও জুলাই আন্দোলনের বিরোধিতাকারীদের পুনর্বাসনের অভিযোগে কমিটি বাতিলের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে ।
রোববার (৩০ নভেম্বর) রাতে রাজশাহী নগরীর বাটার মোড়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা।
এ সময় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই কমিটি বাতিল না করা হলে রাজশাহীতে এনসিপিকে অবাঞ্ছিত করারও হুমকি দেওয়া হয়। সেখানে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এনসিপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন ও জেলা এনসিপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামের ছবি সংবলিত কুশপুতুল দাহ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সুমাইয়া আক্তার।
তিনি জানান, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি রাষ্ট্রীয়ভাবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু ব্যক্তি বর্তমানে এনসিপির সঙ্গে পুনরায় সক্রিয় সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলছে, যা রাজশাহী জেলা কমিটিতে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রতিনিধি কীভাবে বৈধ রাজনৈতিক কাঠামোর ভেতর সক্রিয় থাকতে পারে এ প্রশ্ন আজ দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের। আমরা লক্ষ্য করেছি, বিগত সময়ে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকা সাইফুল ইসলাম জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্রসমাজের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।
তিনি আরও জানান, জুলাই আন্দোলনে ৫ আগস্ট রাজশাহীর আওয়ামী লীগের দোসর রুবেল যে দুই হাতে সাধারণ ছাত্র-জনতার দিকে গুলি চালিয়েছে নির্মমভাবে, তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর ছিল এই সাইফুল। জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দানকারী দল জাতীয় নাগরিক পার্টির রাজশাহী জেলা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে এই সাইফুল ইসলামকে কমিটির শীর্ষ পদে বা আহ্বায়ক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যা অত্যন্ত লজ্জার। গর্হিত কাজ।
তিনি আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের প্রতি এটি অন্যায়, অবিচার ও পরিষ্কারভাবে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হয়। তাই আমরা জুলাই যোদ্ধা ও আহত সদস্যরা জোর প্রতিবাদ জানিয়ে ঘোষণা করছি, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজশাহী জাতীয় নাগরিক পার্টির জেলা কমিটি বাতিল ঘোষণা করতে হবে। সেইসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি। যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই আওয়ামী লীগের দোসরদের বাতিল ঘোষণা না করা হয় তাহলে আমরা রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলব। যদি আমাদের আবারও রাজপথে রক্ত ঝরাতে হয় আমরা রক্ত দিতে প্রস্তুত। আমাদের ইনকিলাব এখনো শেষ হয়নি।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আরেক জুলাই যোদ্ধা আব্দুল বাছির আল হাদী বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে সাইফুল ইসলামকে নিয়ে। আমরা ইতোপূর্বে লক্ষ্য করেছি, আওয়ামী লীগের, মানে একদম সন্ত্রাসী শুটার রুবেলের সঙ্গে তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতা রয়েছে ও আওয়ামী লীগের দোসর মেয়র লিটনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে সে জুলাই আন্দোলনে ছাত্রসমাজের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি, তাকে এনসিপি থেকে বহিষ্কার করার জন্য। তা না হলে আমরা আবারও আন্দোলন গড়ে তুলব।
তিনি আরও বলেন, আমরা এনসিপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমনকে বিষয়টা সুস্পষ্টভাবে বলেছি যে, তার আওয়ামী লীগ সম্পৃক্ততা রয়েছে, তারপরও এই কমিটিতে তাকে আহ্বায়ক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। আমরা ২৪ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দিয়েছি। এরপরও যদি না হয় পরবর্তীতে আবার রাজপথ বেছে নেব, আবারও জুলাইকে জাগিয়ে তুলব। রাজশাহীতে এনসিপিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।


