শেরপুরের নকলায় চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার পাটের ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি গত কয়েক বছরের তুলনায় বাজারমূল্যও ভালো পাওয়ায় পাটচাষিরা খুশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পাট উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ ও সার্বিক পরামর্শের ফলে এবার পাটে তেমন কোনো রোগবালাই দেখা যায়নি।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পাট উন্নয়ন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে উপজেলায় মোট ৫০৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে পাট উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতায় ৯৯০ একর জমিতে প্রণোদনার মাধ্যমে পাট চাষ করানো হয়।
সরেজমিনে উপজেলার মোছারচর, বানেশ্বরদী, বাছুরআলগা, নারায়ণখোলা, পাঠাকাটা ও ভূরদীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব এলাকার পাটচাষিরা পাটখড়ি থেকে সোনালি আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের মধ্যে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে।
বানেশ্বরদী গ্রামের আলী হোসেন ও দেলোয়ার হোসেন, মোজারবাজার এলাকার আরিফ হোসেন এবং জালালাপুর এলাকার কামাল হোসেনসহ কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাটের বাজারে দরপতন, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে অনেক কৃষক পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছিলেন। ফলে দিন দিন পাটের আবাদ কমছিল।
ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ মো. ছায়েদুল হক বলেন, ‘প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা, শ্রমিক সংকট, উচ্চ মজুরি, জাগ দেওয়ার পানির অভাবসহ নানা কারণে দিন দিন কৃষকের পাট চাষের আগ্রহ কমছে। একসময় এ দেশের উৎপাদিত পাট সোনালি আঁশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করেছিল। বর্তমানে নানা কারণে এই সোনালি আঁশের দুর্দিন চলছে। তবে মাঠপর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পাট উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় আবারও এই আঁশের সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। ন্যায্যমূল্যের ব্যাপারে সরকারের সুনজর কামনা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।’
কৃষকেরা জানান, অনেকেই পাট চাষ ছেড়ে শাকসবজি ও অন্যান্য ফসলের দিকে ঝুঁকছেন। তাদের মতে, কৃষি প্রণোদনা প্রকৃত কৃষকের মাঝে সঠিকভাবে বিতরণ না করাও পাট আবাদ কমার একটি কারণ। তবে কেউ কেউ মনে করেন, প্রণোদনা দেওয়ার কারণে উপজেলায় পাটের আবাদ বাড়ছে। যদিও বিভিন্ন তথ্যে দেখা যায়, উপজেলায় পাট আবাদের পরিমাণ কয়েক বছর ধরেই প্রায় স্থির রয়েছে।
উপজেলা উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা তাহমিনা ইয়াসমিন জানান, ‘এ বছর উপজেলার ৩ হাজার কৃষককে পাট চাষের জন্য কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিজন কৃষককে এক কেজি করে বিজেআরআই-৮ তোষা পাটের বীজ এবং ১২ কেজি করে বিভিন্ন রাসায়নিক সার দেওয়া হয়েছে। পরিমিত বৃষ্টি, সহজলভ্য শ্রমিক এবং পাটের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা এবার লাভবান হবেন। আগামীতে পাট চাষের পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুনসালীন মেহেদী জানান, ‘অল্প ব্যয়ে, স্বল্প শ্রমে ও কম সময়ে বেশি লাভের আশায় অনেক কৃষক ধানের পাশাপাশি পাট চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এ বছর উপজেলায় ৫০৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে তোষা পাট ৪২০ হেক্টরে, দেশি পাট ৪৫ হেক্টরে, মেস্তা পাট ২২ হেক্টরে এবং কেনাফ পাট ২০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলার চন্দ্রকোনা, চরঅষ্টধর, টালকী, পাঠাকাটা ও বানেশ্বরদী ইউনিয়নের কৃষকরা এবারও বেশি পাট আবাদ করেছেন। এ ছাড়া পৌরসভা, গণপদ্দী, নকলা, উরফা ও গৌড়দ্বার ইউনিয়নের বিভিন্ন জমিতেও বিভিন্ন জাতের পাটের আবাদ হয়েছে। পাটের বাম্পার ফলন হওয়ায় নকলার কৃষকেরা এখন সোনালি আঁশের সুদিনের স্বপ্ন দেখছেন।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন