দেশের প্রখ্যাত ভাস্কর ও শিল্পী অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান গত মাসের ২০ তারিখে ইন্তেকাল করেন। তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন এবং দেশের শিল্প-সংস্কৃতিতে অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একটি স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২০ আগস্ট) সামিট গাজীপুর ৪৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রাঙ্গণে অবস্থিত ‘হামিদুজ্জামান ভাস্কর্য পার্কে’ এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্মরণসভায় সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও হামিদুজ্জামান খানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মুহাম্মদ আজিজ খান স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, ‘একদিন অফিসে বসে হামিদ ভাইয়ের সাথে ভাস্কর্য নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন, ‘বড় কিছু করতে চাই।’ আমি বললাম, ‘চলুন, আমরা গাজীপুরে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ৪৬৪ মেগাওয়াট রেসিপ্রোকেটিং বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করছি। সেখানে অনেক মেটালের টুকরো, স্ক্র্যাপ পড়ে আছে। এগুলো দিয়ে কিছু সৃষ্টি করুন।’ সেই স্ক্র্যাপ দিয়েই তাঁর কোমল হাতে গড়ে উঠল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ‘হামিদুজ্জামান ভাস্কর্য পার্ক’। তাঁর আনন্দের তুলনা ছিল না। এখানেই দিন-রাত কাজ করতেন, সৃষ্টি করতেন, আমাদের শেখাতেন শিল্প কীভাবে শ্রম থেকে জন্ম নেয় এবং কীভাবে মনুষ্যত্বকে উঁচু করে।’
হামিদুজ্জামান খান ভাস্কর্য পার্ক ঘুরে দেখার মাধ্যমে শুরু হয় স্মরণসভা। হামিদুজ্জামান খানের সহধর্মিণী শিল্পী আইভি জামান আমন্ত্রিত অতিথিদের পার্কের অসাধারণ শিল্পকর্মগুলো দেখান।
পরিদর্শনের পর খ্যাতনামা শিল্পী নিসার হোসেন, মাইনুল আবেদিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের শিক্ষক নাসিমুল খবির ডিউক এবং ভাস্কর আইভি জামান অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খানের শিল্প ও সংস্কৃতিতে অবদান এবং নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের ওপর তাঁর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।
স্মরণসভায় সামিট পাওয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম আখন্দ (অব.), এনডিসি, পিএসসি, পিএইচডি অতিথিদের অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানান। সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খানের ভার্চুয়াল বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হামিদুজ্জামান খানের সহকর্মী, সহপাঠী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদ, নারায়ণগঞ্জ আর্ট কলেজ ও ঢাকা আর্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা, দেশের খ্যাতনামা আর্ট গ্যালারির সদস্যবৃন্দ এবং হামিদুজ্জামানের পরিবার। এছাড়া পার্ক নির্মাণে সঙ্গে যুক্ত সামিটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও উপস্থিত ছিলেন।
প্রফেসর হামিদুজ্জামান খান (১৯৪৬ – ২০২৫) বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ভাস্কর ও শিল্পী ছিলেন। তিনি দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান, একুশে পদকে ভূষিত হন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তাঁর বিখ্যাত ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য সিরিজ “রিমেমব্র্যান্স ৭১” প্রথম তৈরি হয় ১৯৭৬ সালে এবং পরবর্তী চার দশক ধরে বিভিন্ন রূপ ও মাধ্যমে পুনরায় প্রকাশিত হয়েছে। এই শিল্পকর্মে বীর মুক্তিযোদ্ধা, পাখি এবং স্বাধীনতার প্রতীককে নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
দেশে তাঁর ভাস্কর্য স্থায়ীভাবে স্থাপন হয়েছে বঙ্গভবনসহ সিউল অলিম্পিক পার্ক, দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন ভাস্কর্য উদ্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে।
মুহাম্মদ আজিজ খান ও হামিদুজ্জামান খানের বন্ধুত্ব থেকে গড়ে ওঠে দেশের প্রথম ভাস্কর্য পার্ক – ‘হামিদুজ্জামান ভাস্কর্য পার্ক’। সামিট গাজীপুর ৪৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে অবস্থিত এই পার্কে রয়েছে বাংলাদেশের দীর্ঘতম ম্যুরাল। ২০১৯ সালে উদ্বোধনের পর থেকে এখানে হামিদুজ্জামান খান ৮৬টি ভাস্কর্য স্থাপন করেছেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন