বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জুবায়ের দুখু

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৫, ০৩:০১ পিএম

কোথায় পাব সেই জলপাই গাছের বন?

জুবায়ের দুখু

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৫, ০৩:০১ পিএম

জলপাই গাছ জড়িয়ে ধরে কাঁদছে একজন ফিলিস্তিনি নারী। ছবি- সংগৃহীত

জলপাই গাছ জড়িয়ে ধরে কাঁদছে একজন ফিলিস্তিনি নারী। ছবি- সংগৃহীত

ইতিহাস আমাদের বলে, সিংহরাই সবসময় জিতেছে। তারা গর্জন করে এসেছে পাহাড়, মরুভূমি আর শহরের উপর দিয়ে। আর মেষশাবকরা পালিয়ে গেছে- ভয়ে, রক্তে, নীরবে। সত্য কঠিন হলেও স্পষ্ট: সিংহরা মেষশাবক খায়, উল্টোটা কখনো হয়নি।

ট্রাম্পের এই নতুন ‘শান্তি চুক্তি’ বা ‘যুদ্ধবিরতি’ নিয়ে সেই পুরনো একটি কথা বারবার মনে পড়ছে- ‘মেষশাবককে তার ভাগ্য মেনে নিতে হবে, অথবা যতক্ষণ না সে ধরা পড়ে, ততক্ষণ সে দৌড়াবে।’ এই কথায় লুকিয়ে আছে ইতিহাসের নিষ্ঠুর এক সত্য- শক্তিশালীরা শাসন করে, দুর্বলরা মানিয়ে নেয়।

কিন্তু প্রশ্ন হলো- এই কি চিরন্তন নিয়ম? দুর্বলরা কি সবসময় পালাবে? নাকি একদিন তারা নিজেরাই নিজেদের গল্প লিখবে?

ট্রাম্পের এই নতুন পরিকল্পনাটি ছিল এক নতুন কৌশল- নতুন এক সোনার খাঁচা। দেখতে চকচকে, কিন্তু ভেতরে বিভক্ত ভূখণ্ড, নামে মাত্র কাগজের একটি রাষ্ট্র- বাস্তবে এক উপনিবেশ। ফিলিস্তিনিদের বলা হলো, তাদের ইতিহাস ভুলে যেতে, তাদের দুঃখ চেপে রাখতে, আর অন্যায়কে ‘শান্তি’ বলে মেনে নিতে।

কিন্তু ফিলিস্তিন কেবল একটুকরো জমি নয়। এটি এক প্রাচীন জলপাই গাছের মতো- যার শিকড় হাজার বছরের গভীরে, যার মাটি মানুষের রক্তের গন্ধে ভরা। নবী, কবি আর সাধারণ মানুষের স্মৃতিতে গড়ে ওঠা এক জাতির নামই ফিলিস্তিন। অনেক বিজয়ী এসেছে, আগুন লাগিয়েছে, গাছ কাটতে চেয়েছে- তবুও এই প্রাচীন জলপাইগাছটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে।

আজও সেই গাছের ডালে ঝুলে আছে আশা- যারা হার মানেনি। তারা যুদ্ধ করছে, অথচ অস্ত্র নেই হাতে, বরং টিকে থাকার দৃঢ় মনোভাব নিয়ে তারা এখনো স্বপ্ন দেখে নতুন দিনের।

যখন রকেট গর্জে ওঠে, গাজার ধ্বংসস্তূপে এক শিশু দেয়ালে একটি পাখি আঁকে। জেরুজালেমের গলিতে এক দাদি তার নাতিকে বলেন মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা গ্রামের নাম। আর শরণার্থী শিবিরে থাকা গুলতি-হাতে শিশুরা এখনো স্বপ্ন দেখে- একদিন ফিরবে তারা, ফিরবে নিজেদের ঘরে। হয়তো ভাঙা ঘর, তবুও সেই স্বপ্নে আছে তাদের নিজেদের একটি ঘর।

তারা বিজয় চায় না, আধিপত্য চায় না। তারা শুধু ফিরে যেতে চায় নিজেদের ঘরে- একটা খোলা খেলার মাঠে। তারা চায় সম্মান, মর্যাদা- চায় জলপাইয়ের সেই বন, চায় সেই মুগ্ধ বাতাস, যা তাদের পূর্বপুরুষরা পেয়েছিল।

সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো- যারা একসময় ঘেটো, নির্বাসন আর গণহত্যার শিকার ছিল, তারাই আজ অন্যদের উপর দেয়াল তুলছে, অবরোধ দিচ্ছে, এমনকি গণহত্যা চালাচ্ছে।

ইসরায়েলের সামনে এখন দুটি পথ- একটি হলো দখলদারির পথ, যা ঘৃণা আর যুদ্ধ ডেকে আনে; অন্যটি হলো ন্যায়বিচারের পথ, যেখানে সত্যিকারের শান্তি সম্ভব, যেখানে কেবলই মানুষ বাঁচবে।

শুধু ইসরায়েল না- এই হত্যাযজ্ঞে আমেরিকাও প্রশ্নের মুখে আজীবন। তারা কি চিরকাল অন্যায়কে সমর্থন করবে? যুদ্ধাপরাধকে চোখ বুঁজে মেনে নেবে? মিথ্যাকে হৃদয়ে স্থান দেবে? নাকি তারা সত্যকে গ্রহণ করে, ন্যায়ের পাশে দাঁড়াবে?

সামাজিক যোগাযোগের এই দিনে আর কেউ ঘুমিয়ে নেই, বিশ্বের মানুষ জেগে উঠছে। মানুষ প্রতিনিয়ত তাদের মতামত দিচ্ছে, আন্তর্জাতিক আদালতও রায় দিচ্ছে। এমনকি আমেরিকার ভেতরেও মানুষ প্রশ্ন তুলছে তাদের সরকারের ভূমিকা নিয়ে। ইতিহাসের ভুল দিকে দাঁড়ানো সহজ, কিন্তু সময় থাকতে সঠিক পথে ফিরে আসা আরও সম্মানজনক।

আর মুসলিম নেতারা? আপনারা কি সত্যিই বুঝতে পারেননি যে এই তথাকথিত শান্তি পরিকল্পনা বা যুদ্ধবিরতি একটি ফাঁদ? আপনারা হয়তো লাল গালিচা সংবর্ধনা আর কিছু ছবির বিনিময়ে ফিলিস্তিনিদের ত্যাগ করেছেন? আপনারা কি বোঝেন- একটি জাতির যন্ত্রণা কি এত সস্তা?

Link copied!