ঢাকা রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫

চট্টগ্রাম কাস্টমসে কর্মবিরতি, বন্দরে কন্টেইনার জট

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২৫, ২০২৫, ০৫:০৮ পিএম
কাস্টম হাউজের কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট। ছবি- সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গড়ে দৈনিক চার হাজার কনটেইনার খালাস হয়। তবে কাস্টম হাউজের কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে সব ধরনের কার্যক্রম। গত ১৫ মে থেকে শুরু হওয়া এই কর্মবিরতিতে কনটেইনার খালাসসহ শুল্কায়ন কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। 

যার সরাসরি প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নিত্যপণ্যের সরবরাহ চেইনে। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, চলমান অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে বন্দরে মারাত্মক জট তৈরি হবে এবং ঈদের আগে বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে।

কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার ৫০০ আমদানি ও পাঁচ হাজার রপ্তানি সংক্রান্ত বিল অব এন্ট্রি এবং বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল হয়ে থাকে। কিন্তু কর্মবিরতির কারণে এই কার্যক্রম প্রায় পুরোপুরি বন্ধ। ফলে বন্দরের ইয়ার্ডে শত শত কনটেইনার আটকা পড়ে রয়েছে। এতে নিত্যপণ্যের সরবরাহ চেইনে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, ‘বন্দরের জেটিতে পণ্য ওঠানামা স্বাভাবিক থাকলেও গেইটে ডেলিভারি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না হলে বন্দরে জট তৈরি হবে।’

কাস্টম হাউসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।’

তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন। এনবিআর বিলুপ্ত হলে কাস্টমস কাঠামো ভেঙে পড়বে।’

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র ও উপ-কমিশনার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিমানবন্দর ও রপ্তানি কার্যক্রম করছি। তবে আমদানি সংক্রান্ত কোনো কাজ করছি না, কারণ এটি কর্মবিরতির আওতায় পড়ে।’ 

এই অচলাবস্থায় সবচেয়ে বেশি ভুগছেন আমদানি-রপ্তানিকারক এবং সিঅ্যান্ডএফ (ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং) এজেন্টরা।

চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমদানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পণ্য আটকে যাচ্ছে। এতে চাহিদাসম্পন্ন আমদানি পণ্যের সংকট তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীরা এ সুযোগে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে পারে।’

তিনি জানান, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির মাধ্যমে সরকারকে দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়েছে।’

সিএন্ডএফ এজেন্ট বাপ্পু দাশ বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি পণ্য বোঝাই ট্রাক বন্দরে আটকে আছে। ফলে শিপমেন্ট সময়মতো করা সম্ভব হচ্ছে না, এতে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সাধারণ ভোক্তার ওপরও এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান বলেন, কাস্টমস কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমরা সময়মতো পণ্য ডেলিভারি দিতে পারছি না। বিশেষ করে পচনশীল পণ্য আটকে থাকায় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছি।

তিনি আরও বলেন, ‘এই সংকট দ্রুত না কাটলে বাজারে নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা দিতে পারে। সামনে ঈদ, সেই চাপের আগেই সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’

চট্টগ্রাম বন্দরে চলমান অচলাবস্থার ফলে ব্যবসায়ী ও সরবরাহ চেইনের সাথে জড়িত সব পক্ষই উদ্বেগ প্রকাশ করছে। সবার দাবি, পণ্য খালাস ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত সমাধান নিশ্চিত করা হোক।

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, ‘বন্দর ইয়ার্ডে মোট ৫৩ হাজার টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক) কনটেইনার রাখার সক্ষমতা রয়েছে। তবে অপারেশনাল কার্যক্রমে সুষ্ঠুভাবে করার জন্য কিছু জায়গা খালি রাখতে হয়। মোট ৪৫ হাজার টিইইউসের বেশি বন্দরে কনটেইনার রাখার সুযোগ নেই।’

বন্দরে বর্তমানে প্রায় ৪১ হাজার টিইইউস কনটেইনারের স্তূপ জমেছে। আবার দৈনিক গড়ে জাহাজ থেকে প্রায় এক হাজার টিইইউস কনটেইনার খালাস হচ্ছে। কিন্তু এ পরিমাণ কনটেইনার এখন বন্দর থেকে খালাস করছেন না আমদানিকারকরা। ফলশ্রুতিতে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি চলতে থাকলে কয়েকদিনের মধ্যেই বন্দরে জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাস বন্ধ করে দিতে হবে।

জানা যায়, এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এর প্রতিবাদ করে আসছেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 

গত ১৩ মে আগারগাঁও এনবিআরের সামনে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলম বিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে অনুসারে ১৪, ১৫, ১৭, ১৮ ও ১৯ মে কলম বিরতি কর্মসূচি পালিত হয়। আলোচনার আশ্বাসে ২০ মে আন্দোলন স্থগিত রেখে ২১ মে থেকে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসে।