চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বিতর্কিত অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেককে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আগামী ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বন্দরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আর চুক্তি নবায়ন করবে না বন্দর কর্তৃপক্ষ।
টার্মিনালের কাজ বুঝে নেওয়ার প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে কর্মকর্তারা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ৭ জুলাই থেকে এনসিটি টার্মিনাল অপারেট করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরমধ্য দিয়ে বন্দরে দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় রাজত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেকের বিদায়ঘণ্টা বাজছে।
কর্মকর্তারা জানান, বন্দরের বৃহৎ এই টার্মিনাল পরিচালনা করতে লাগবে অতিরিক্ত টাকা। এসব টাকা খরচ করতে আবার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগে। এই অনুমতি নিতে গত ১৯ জুন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর চিঠি লিখেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান। এতে এনসিটি পরিচালনার জন্য আনুমানিক ৪২ কোটি টাকা বাজেট অনুমোদনের অনুরোধ জানানো হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এনসিটি টার্মিনালে বর্তমানে থাকা কি-গ্যান্ট্রি ক্রেন, রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ অন্যান্য ইক্যুইপমেন্ট পরিচালনা এবং আইটি ব্যবস্থাপনা বাবদ পরিচালনায় মাসিক ৭ কোটি টাকা খরচ হবে। সব মিলিয়ে ৬ মাস এনসিটি পরিচালনার জন্য আনুমানিক মোট ৪২ কোটি টাকা ব্যয় হবে বন্দর কর্তৃপক্ষের।
এই পরিমাণ সরকারি অর্থ খরচ করতে হলে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ অনুযায়ী অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।
বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, এনসিটির বিষয়ে গত ১৮ জুন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে টার্মিনালটি বন্দর কর্তৃক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। যেহেতু নতুন করে দরপত্রের মাধ্যমে এনসিটি পরিচালনার জন্য বেসরকারি অপারেটর নিয়োগ একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই আমদানি-রপ্তানি নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ পারসোনেল অফিসার ও মুখপাত্র নাসির উদ্দিন বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্তের পর টার্মিনাল পরিচালনা করতে ব্যয় নির্বাহের অনুমতির জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিক অনুমতি পেলে চূড়ান্ত কাজ শুরু হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে বন্দরের মেকানিক্যাল এবং ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা সাইফ পাওয়ারটেক থেকে কাজ বুঝে নেওয়া শুরু করেছেন।’
জানা যায়, সাইফ পাওয়ারটেক ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করে বন্দরের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের মাধ্যমে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলটির শীর্ষ নেতাদের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটি বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংসহ নানা খাতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।
সরকারের উচ্চ মহলের সিদ্ধান্তে বন্দর কর্তৃপক্ষ টেন্ডার না দিয়েই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বছরের পর বছর চুক্তি নবায়ন করে। আবার কোনো সময় টেন্ডার হলেও নীতিমালায় এমন সব শর্ত দেওয়া হয়, যাতে সাইফ পাওয়ারটেক ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, নূর-ই-আলম চৌধুরী, সামশুল হক চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ. জ. ম নাছির উদ্দীনসহ দলটির শীর্ষ নেতারা। এই ঘনিষ্ঠতাই ছিল তার ‘প্রধান সম্পদ’। এতে বন্দর ছাড়াও দেশের আরও অনেক বড় সরকারি প্রকল্পে প্রবেশাধিকার পান।
আপনার মতামত লিখুন :