রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় ১০০ গ্রাম হেরোইন কাণ্ডে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী ইফতেখার হাসানের বদলি ঠেকাতে মানববন্ধন করেছে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাং সদস্যরা।
সোমবার (২৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে টাউন প্রধান সড়কে এই মানববন্ধন করেন।
ওসিকে বাঁচাতে মানববন্ধন করলো যারা
ইকবাল উরফে কসাই ইকবাল জেনেভা ক্যাম্পের ৬/২৪ রোডে মাদক স্পট চালায়। সে আরেক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বিল্লালের আপন বড় ভাই। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। মমতাজ আশরাফী জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সোহেল ওরফে বুনিয়া সোহেলের ছোট ভাই কাল্লুর আপন চাচা শ্বশুর।
অভিযোগ রয়েছে, জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বুনিয়া সোহেলের সকল মাদক ব্যবসা দেখভাল করেন তিনি। খোকন আরেক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী চুয়া সেলিমের শালা। জেনেভা ক্যাম্পের পাশে গজনবী রোডে লাকড়ীর দোকানের পাশে মাদকের স্পট চালায় সে।
ইরফান জেনেভা ক্যাম্পের ৪ নম্বর সেক্টর এ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। রুবেল ওরফে ইয়াবা রুবেল। সে ২ নম্বর সেক্টরের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। জেনেভা ক্যাম্পের মাদকের স্পট চালায় এক সময়ের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী পঁচিশ এর খালা শ্বাশুড়ি ও ১ নম্বর সেক্টরের মাদক ব্যবসায়ী সুমন এর মা সকিনা বেগম। মাদক ব্যবসায়ী বেচু ওরফে ল্যাংড়া বেচু ক্যাম্পের ২ নম্বর সেক্টরে চুয়া সেলিমের মাদক বিক্রি করে।
এই মানববন্ধনে যোগ দিয়েছে কিশোর গ্যাং
মোহাম্মদপুরের ভয়ঙ্কর শীর্ষ কিশোর গ্যাং 'কবজি কাটা গ্রুপ' আনোয়ারের অন্যতম সহযোগী নবোদয় এলাকার রাকিব ওরফে হাত ভাঙ্গা রাকিব। সে নবোদয় এলাকায় শীর্ষ কিশোর গ্যাং লিডার এলেক্স সুমনের ছোট ভাই। তার সাথে কবজি কাটা গ্রুপের সদস্য ফাহাদ ও নীরব নামে দুই কিশোর গ্যাং সদস্য মানবন্ধনে অংশ নেয়। তাদের সকলের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া বহিষ্কৃত যুবদল নেতা জাহিদ মোড়লের লোকও এই মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সোহেল ওরফে বুনিয়া সোহেলের আপন ছোট ভাই কাল্লু'র চাচা শ্বশুর মমতাজ আশরাফী বলেন, আমরা ওসি সাহেবের বিরুদ্ধে করা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি। পুলিশ আসলে জনগনের বন্ধু। তাকে (ওসি) শত্রু ভাবা যাবেনা। তাদের কাজ কর্মে যদি কোন ত্রুটি হয়, সেটা ওনারা তদন্ত করবে। জনগন পুলিশের ব্যাপারে বানোয়াট কিছু করবে সেটা মেনে নেওয়া যাবে না। ওসি স্যার আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছে। পুলিশকে আমাদের শত্রু ভাবা যাবে না। ওনাদেরকে আমরা বন্ধু হিসেবে গ্রহন করতে হবে।
২ নম্বর সেক্টরে চুয়া সেলিমের মাদক ব্যবসায়ী বেচু ওরফে ল্যাংড়া বেচু বলেন, আমরা ওসি সাহেবের পক্ষে এখানে দাঁড়িয়েছি। ওসি স্যার ভালো লোক। আমরা সব সময় এ থানায় ওসি স্যারকে চাই।
এছাড়াও, মোহাম্মদপুর এলাকার ভয়ঙ্কর শীর্ষ কিশোর গ্যাং ‘কবজি কাটা’ গ্রুপের অন্যতম সদস্য রাকিব ওরফে হাতভাঙ্গা রাকিব বলেন, আমরা ওসি স্যার পক্ষে দাঁড়িয়েছি। আমরা চাই ওসি স্যার সবসময় এ থানায় থাকুক।
আরেক কিশোর গ্যাং সদস্য ফাহাদ বলেন, আমরা চাই ওসি স্যার সব সময় এ থানায় থাকবে। তিনি আমাদের পাশে থাকবে সব সময়।
ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে উদ্ধার হয়েছিল প্রায় ১০০ গ্রাম হেরোইন। কিন্তু মামলার কোনো অস্তিত্ব নেই থানার নথিপত্রে। মাদক উদ্ধার এবং একজন আটকের এ ঘটনা ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে রীতিমতো চাঞ্চল্য। প্রায় ১০ লাখ টাকার হেরোইন উদ্ধার হলেও মামলা না হওয়ায় থানার ওসির ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
মোহাম্মদপুরের রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের পাশে ডিউটি করছিলেন এসআই আলতাফ, এসআই শাখাওয়াত, এএসআই সাত্তারসহ আরও এক কনস্টেবল।
তারা জানতে পারেন, জেনেভা ক্যাম্পে একজনকে মারপিট করে আটকে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে এসআই শাখাওয়াত ও এএসআই সাত্তার তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।
এ সময় আসামির রেকর্ড যাচাই করে দেখা যায়, তার বিরুদ্ধে মাদকের দুটি মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে। সে সময় তার কাছে কোনো হেরোইন পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ উঠেছে,পরবতী সময়ে ওসির নির্দেশে এসআই আলতাফ আটক সাদ্দামকে ১০০ গ্রাম হেরোইন দিয়ে চালান করার জন্য একটি এফআইআরের (অভিযোগপত্র) ড্রাফট, মামলার নম্বর, জিডি ও আসামি চালানের কপি তৈরি করেন। কিন্তু অদৃশ্য কোনো কারণে মামলাটি পরবর্তী সময়ে আর রুজু হয়নি। এই ঘটনায় কয়েকটি গণমাধ্যম সংবাদ প্রচার করে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল বিকেলে মোহাম্মদপুরে টাউন হল এলাকায় হাসানের পক্ষে মানববন্ধন করে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোরগ্যাং সদস্যরা।
এর আগে, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও কিশোর গ্যাং এর সাথে ওসির আঁতাত আছে এমন অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় ছাত্র-জনতা ওসির অপসারন চেয়ে গত শুক্রবার (২৫ জুলাই) থানার সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি করে। সে ঘটনার পর নতুন করে ১০ লাখ টাকার মাদক উদ্ধার এবং এ মামলা গায়েব করে মামলা বাণিজ্যের অভিযোগের ঘটনা ঘিরে নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে রীতিমতো চাঞ্চল্য। প্রায় ১০ লাখ টাকার হেরোইন উদ্ধার হলেও মামলা না হওয়ায় থানার ওসির ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
এ নিয়ে সংবাদ প্রচারের পর আজ সোমবার (২৮ জুলাই) মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাং সদস্যরা ওসিকে এ থানা থেকে অপসারন না করতে মানবন্ধন করে জেনেভা ক্যাম্পের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় কিশোর গ্যাং সদস্যরা।