আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে আজ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। এতে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে নাশকতার চেষ্টা করলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে, নগরবাসীকেও সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
সোমবার (১০ নভেম্বর) ভোর ৪টার দিকে রাজধানীর মিরপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গড়া গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই বিস্ফোরণে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে সে সম্পর্কেও এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মিরপুর মডেল থানার ওসি সাজ্জাদ রোমান বলেন, ‘ভোর ৪টার দিকে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় কে বা কারা একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, এমন তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। আর হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে এই নাশকতার পেছনে যেই থাকুক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনতে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছে।’
এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সোমবার (১০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডে অবস্থিত অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান শস্য প্রবর্তনার সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ আহত বা হতাহত হয়নি।
ঠিক একই সময়ে ধানমন্ডি-২৭ নম্বরে মাইডাস সেন্টারের সামনে অজ্ঞাত দুই-তিন ব্যক্তি মোটরসাইকেলে এসে ধানমন্ডি থানাধীন সীমানায় ককটেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনাতেও কোনো হতাহত নেই।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পৃথক বার্তায় এমন তথ্যের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, প্রবর্তনার গেটের ভেতরে ফাঁকা জায়গায় ও সামনের পাকা রাস্তায় দুটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। অজ্ঞাতনামা দুই ব্যক্তি মোটরসাইকেলে এসে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। প্রবর্তনা ফরিদা আক্তারের ভাড়ায়চালিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটিতে ডিএমপির এসএএফ শাখার তিনজন পুলিশ সদস্য সর্বদা ডিউটিতে নিয়োজিত থাকে। ধানমন্ডির ঘটনাটিও একই সময়ে ঘটে। দুটি ঘটনায় কোনো হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ পায়নি বলে জানায় ডিএমপি।
যদিও বেশ কয়েকদিন ধরেই রাজধানীতে ঘটে চলেছে ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনা। গেল শুক্রবার (৭ নভেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর রমনা এলাকায় অবস্থিত সেন্ট মেরি’স ক্যাথেড্রাল গির্জায় দুটি ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হলেও আরেকটি অবিস্ফোরিত থেকে যায়। পরে পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল এসে সেটি নিষ্ক্রিয় করে।
একই দিন রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সেন্ট যোসেফ উচ্চবিদ্যালয়ের তিন নম্বর ফটকের ভেতরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে বিদ্যুৎ ছিল না। ঠিক সেই সময় ৩ নম্বর ফটকের বাইরে থেকে একটি ককটেল ভেতরে ছুড়ে মারা হয়। এতে বিস্ফোরণ হয়।
এদিকে শুধু ককটেল নিক্ষেপ করাতেই থেমে নেই নাশকতাকারীরা। যানবাহনেও আগুন দিতে শুরু করেছে তারা। সোমবার (১০ নভেম্বর) ভোররাতে রাজধানীর আধাঘণ্টার ভেতর মেরুল বাড্ডা ও শাহজাদপুর এলাকায় দুটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরত কর্মকর্তা রাশেদ বিন খালেদ বলেন, ‘ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে গুলশানের শাহজাদপুর এলাকায় যাত্রীবাহী ভিক্টর পরিবহনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনে। বাসটি সদরঘাট থেকে উত্তরার দিকে যাচ্ছিল। আরেকটি ঘটনা ঘটেছে বাড্ডার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। সকাল সোয়া ৬টার দিকে যাত্রীবাহী আকাশ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
তিনি আরও বলেন, বাসে কীভাবে আগুন লেগেছে তা এখনো জানা যায়নি। ঘটনাস্থলে তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা মনে করছেন, আগুনটি নাশকতা নাকি দুর্ঘটনাজনিত তা নিশ্চিত হতে তদন্তের মাধ্যমে জানতে হবে।
এ ছাড়াও রোববার (৯ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার উথুলী এলাকায় মুন্নু ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে শিবালয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন সকাল ৬টার দিকে উথুলী মোড় থেকে গিলন্ড পর্যন্ত ওই বাসে মুন্নু ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়া করা হয়। প্রতিদিনের মতো রোববারও বাসটি উথুলী মোড়ে পার্কিং করে রাখা ছিল। সন্ধ্যার পর কে বা কারা বাসটিতে আগুন দেয়।
পুলিশ বলছে, যেসব জায়গায় ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। দুর্বৃত্তদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
-20250415093637-20251110092521.webp)
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন