রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনার আগের দিনই ওই বাসায় দুই হাজার টাকা চুরির একটি ঘটনা ঘটে। গৃহিণী লায়লা আফরোজ নতুন গৃহকর্মী আয়েশার ওপরই সন্দেহ করেছিলেন। টাকা ফেরত না দিলে পুলিশে দেওয়ার হুমকিও দেন তিনি। পরদিনই ঘটে হত্যাকাণ্ড।
এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি গৃহকর্মী মোছাম্মৎ আয়েশা ও তার স্বামী জামাল শিকদার রাব্বিকে বুধবার সকালে ঝালকাঠির নলছিটি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের একটি দল।
অভিযানের নেতৃত্বে থাকা মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, গ্রেপ্তারের পর আয়েশা হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।
চুরি নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা, তারপর ছুরিকাঘাত
এসি মামুনের ভাষ্য, হত্যার দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কোনো এক কারণে লায়লা আফরোজ আয়েশাকে জাপটে ধরেন। ধারণা করা হচ্ছে, আবারও চুরি করতে দেখে ফেলেছিলেন তিনি। মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে আয়েশা রান্নাঘরে থাকা ফল কাটার ছুরি হাতে নেয় এবং লায়লাকে একের পর এক আঘাত করতে থাকে। লায়লা নিস্তেজ হয়ে পড়লে চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে যায় স্কুলছাত্রী নাফিসা আজিজের। মাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতেই তাকেও ছুরিকাঘাতে হত্যা করে আয়েশা।
হত্যাকাণ্ডের সময় একই ছুরি দিয়ে আয়েশার হাতেও জখম হয়।
চিহ্ন মুছতে লুট করা মালামাল
গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর বাসা থেকে লুট করা একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে। আরেকটি ল্যাপটপ বিক্রি করে ফেলেছে বলে জানিয়েছে আয়েশা। চুরি করা মোবাইল ফোনটি পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। স্বর্ণালংকার বা টাকা লুট হয়েছে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
আয়েশা নানান বাসায় কাজ পাওয়ার জন্য ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করতেন। তিনি জেনেভা ক্যাম্পে থাকেন বলে পরিচয় দিতেন। তবে প্রকৃত ঠিকানা সাভারের হেমায়েতপুর।
চুরি ও পুরোনো মামলার সূত্র ধরেই শনাক্ত
এসি মামুন বলেন, আগের একটি চুরির ঘটনায় আয়েশার পরিচয় শনাক্ত হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদপুর থেকে পালিয়ে হেমায়েতপুরে যায় সে। সেখান থেকে স্বামীকে নিয়ে ঝালকাঠির নলছিটিতে আত্মগোপনে থাকে। দুই দিন তিন রাত অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
সোমবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি সাততলা ভবনের বাসা থেকে লায়লা আফরোজের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নাফিসার মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল প্রতিবেদনে মা–মেয়ের শরীরে সর্বমোট ২৬টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়।
নিহত নাফিসার বাবা আ জ ম আজিজুল ইসলাম, যিনি উত্তরার সানবিমস স্কুলের শিক্ষক, ওইদিনই মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন