রাজধানীর গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর চার নেতাকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
তারা হলেন- সংগঠনটির সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ, ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মো. ইব্রাহিম হোসেন, সদস্য সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। অন্য এক অভিযুক্ত অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাকে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
চাঁদাবাজির অভিযোগ ও পুলিশের তথ্য
মামলা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ জুলাই সমন্বয়ক পরিচয়ে রিয়াদ ও তার সহযোগীরা শাম্মী আহমেদের গুলশানের বাসায় যান।
তারা দাবি করেন, সেখানে পলাতক আসামি আছেন- এমন তথ্য দিয়ে পুলিশ নিয়ে যান। তবে পুলিশ কাউকে খুঁজে না পেয়ে ফিরে আসে। এরপর তারা শাম্মীর স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে মামলা ও গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়ে প্রথম দফায় ১০ লাখ টাকা আদায় করেন।
পরবর্তীতে আরও দুই দফায় ৪০ লাখ টাকা দাবি করে তারা। টাকা না দিলে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। সর্বশেষ গত শনিবার (২৬ জুলাই) চাঁদাবাজি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে হাতেনাতে ধরা পড়েন রিয়াদসহ পাঁচজন।
রোববার (২৭ জুলাই) এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গুলশান থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
মামলার বিবরণ ও অতিরিক্ত আসামি
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, অভিযুক্তরা মোট ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা জানালে তাকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ বলে আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দেন তারা।
প্রথম দফায় ১০ লাখ টাকা নেওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় আরও টাকা নিতে ফের আসেন। মামলা হয়েছে মোট ৫ জন গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নামে। এছাড়া, কাজী গৌরব ওরফে অপু নামের আরও একজন এবং অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন্স) মো. নজরুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘এই ছেলেরা পুলিশকে ভয় দেখানোর ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করেছে। পুলিশ নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছে, যখন-তখন ধরিয়ে দিতে পারি। এরপরই চাঁদা আদায় করে।’
পাকা ভবন নির্মাণ নিয়ে প্রশ্ন
অভাব-অনটনে বেড়ে ওঠা রিয়াদ বর্তমানে তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুরে পাকা ভবন নির্মাণ করছেন বলে জানা গেছে। দুই মাস আগে ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে এবং সম্প্রতি ছাদ ঢালাই দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে রিয়াদের পরিবার বলছে, ‘বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে স্বামীর জমানো টাকা, ব্র্যাকের ঋণ ও বিভিন্নজনের অনুদান এবং ধারদেনা করে। তবে ঋণ নেওয়ার কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তার মা রেজিয়া বেগম।
পূর্বে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজি অভিযোগ
গুলশান থানার তদন্ত কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান আদালতে জানান, ‘অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংগঠনের পরিচয়ে রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। এদের বিরুদ্ধে আরও তদন্ত চলছে।’
আপনার মতামত লিখুন :