ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

সবজির আগুনে পুড়ছে ক্রেতা, উত্তাপ পেঁয়াজেও

আসাদজ্জামান তপন
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ১১:২০ এএম
ছবি - সংগৃহীত

শীতের মৌসুমে তাজা সবজি সাধারণ মানুষের রান্নাঘরে অপরিহার্য। তবে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও বাজারে শীতকালীন সবজির দাম এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য তা ক্রয়যোগ্যতার বাইরে চলে গেছে। কাঁচা বাজার থেকে সুপারশপ, যেখানে-সেখানে সবজির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ক্রেতাদের জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। নিয়ন্ত্রণহীন এই চড়া দামের আগুনে পুড়ছে সাধারণ ক্রেতা। 

এদিকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদনের পরেও অস্থির পেঁয়াজের বাজার। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। উদ্দেশ্য হচ্ছে ভোক্তার পকেট কেটে বাড়তি মুনাফা করা। এতে বাজারে পণ্যটি কিনতে এসে বিড়ম্বনায় পড়ছেন ক্রেতা। আর এই খেলার নীরব দর্শকের ভূমিকায় প্রশাসন।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে লম্বা বেগুন ৮০-১০০ টাকায় এবং গোল বেগুন ১২০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়েছে, যা কমে লম্বা বেগুন ৭০-৮০ টাকা এবং গোল বেগুন ৮০-৯০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। সবুজ শিমের দাম ৫৫-৬০ টাকা। রঙিন শিম ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

প্রতিটি বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়। প্রতি কেজি টমেটোর দাম মান ও বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া শালগম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৮০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, নতুন আলু প্রতি কেজি ১২০ টাকা, পেঁয়াজের ফুল প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজি বিক্রেতারা বলছেন, শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। এ কারণে দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এতে করে বিক্রিও বেড়েছে। তবে ক্রেতাদের দাবি মৌসুমে সবজির বাজার চড়াই রয়েছে। যে দাম কমেছে তা পূর্বের বছরগুলোর তুলনায় অনেক ফারাক। ডিসেম্বরে শীতের সবজির দাম আগে কখনো এত ছিল না। 

অন্যদিকে, আমদানি হচ্ছে না বলে নতুন মৌসুম শুরুর শেষ মুহূর্তে পেঁয়াজের দামও বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা।

শেষ দুই-তিন দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত। এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা দামে। পেঁয়াজের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ সংকটের কারণেই পুরোনো পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তবে বাজারে মুড়িকাটা নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। যদিও সেটা পরিমাণে খুব অল্প। আর পাতাসহ পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। 

বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সরবরাহ কম নয়; বরং মূলত দালাল চক্র ও পাইকারি হোলসেল বাজারের অনিয়মমূলক প্রভাবের কারণে দাম বেড়ে যাচ্ছে।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শীতকালীন সবজি সরবরাহের পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকা সত্ত্বেও দাম বৃদ্ধির পেছনে কৃষক থেকে বাজারে সবজি পৌঁছানোর পথে দালাল ও পাইকারদের লোভের প্রভাব ক্রেতার ওপর প্রতিফলিত হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিংয়ের অভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন।

সাধারণ ক্রেতারা পেয়াজ ও শীতকালীন সবজির চড়া দামের ভোগান্তিতে মানসিক চাপ এবং খাদ্যসংক্রান্ত সমস্যায় পড়ছেন। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। কেউ কেউ এমনকি সবজি কম ব্যবহার করে বা বিকল্প খাবার খুঁজে খাওয়ার চেষ্টা করছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করান, সরকারকে বাজারে সরবরাহ এবং দাম নিয়ন্ত্রণে আরও সক্রিয় হতে হবে। কৃষকের কাছ থেকে ক্রেতার কাছে সরাসরি সাপ্লাই চেইন নিশ্চিত করা, পাইকারি দালাল চক্রের নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারে পর্যাপ্ত মনিটরিং কার্যকর করা জরুরি। না হলে, শীতের মৌসুমে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও জীবনযাত্রার মান উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।