দীর্ঘ পাঁচ মাস ১০ দিন বন্ধ থাকার পর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)-এ অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকাল থেকে শ্রেণিকক্ষে ফিরতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে ফিরেছে স্বাভাবিকতা ও উৎসবের আমেজ।
সকাল থেকে বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা দলে দলে ক্লাসে যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী প্রথম দিনেই ক্লাসে উপস্থিত হন। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও এসেছেন। ক্লাস শুরুর দিন বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদ হেলালী।
শিক্ষার্থীদের অভিমত
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী এম নাহিদ রায়হান জিম বলেন, ‘পাঁচ মাসের বেশি সময় ভার্সিটি বন্ধ থাকায় মানসিক চাপে ছিলাম। ফাইনাল ইয়ারের অনেকেই চাকরির সুযোগ হারিয়েছে। এখন আমরা চাই দ্রুত পরীক্ষা নিয়ে সেশনজট দূর করা হোক।’
লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নিয়াজ মাহমুদ হামিম বলেন, ‘আমরা এখন দ্বিতীয় সেমিস্টারে থাকার কথা, কিন্তু এখনো পিছিয়ে আছি। ভিসি স্যারের কাছে অনুরোধ, যত দ্রুত সম্ভব আমাদের পরীক্ষা নেওয়া হোক।’
সিএসই বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী হাসিবুল হাসান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘নতুন ভিসি স্যারের নেতৃত্বে কুয়েটের সব সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে বলে বিশ্বাস করি।’
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাসফিয়া জামান সামিহা বলেন, ‘এই কয় মাসে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা চাই না এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক।’
প্রশাসনের বক্তব্য
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার জানান, ‘আজ থেকে ক্লাস শুরু হলেও সব শিক্ষার্থী এখনো ফেরেনি। যাদের ক্লাস রয়েছে তারা অংশ নিচ্ছে। পরীক্ষা থাকাদের অনেকে প্রস্তুতির জন্য সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের ওরিয়েন্টেশন ১৪ আগস্ট এবং ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদ হেলালী বলেন, ‘শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে, ধীরে ধীরে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
পটভূমি
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনায় কুয়েটে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। ওই দিনের সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্লাস ও হল বন্ধ ঘোষণা করে।
রমজান ও ঈদের ছুটি মিলিয়ে প্রায় দুই মাস পর গত ১৩ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা জোরপূর্বক ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এর মধ্যেই আন্দোলনের মুখে তৎকালীন উপাচার্য ও প্রো-ভিসিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ১ মে অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি নিয়োগ দেওয়া হলেও তিনি ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এদিকে, শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগে ৪ মে আন্দোলনে যায় শিক্ষক সমিতি। দুই মাস দুই দিন ভিসি ছাড়াই চলা কুয়েটের জন্য গত ২৪ জুলাই উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক (অব.) ড. মো. মাকসুদ হেলালী। তিনি ২৫ জুলাই যোগদান করেন এবং টানা সভা ও আলোচনার মাধ্যমে পরিবেশ স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেন।
সোমবার (২৮ জুলাই) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবেশ উন্নয়ন কমিটির উন্মুক্ত আলোচনা শেষে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) থেকে ক্লাস চালুর সিদ্ধান্ত হয়। এতে দীর্ঘদিন পর শিক্ষাঙ্গনে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য।