সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হওয়ার নিয়মে আসছে বড় পরিবর্তন। এবার নিয়োগের আগে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে ‘চাকরিপূর্ব প্রশিক্ষণ’।
জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা অ্যাকাডেমি (নেপ) এটি বাস্তবায়ন করবে, যার মাধ্যমে প্রার্থীরা শিক্ষকতার দায়িত্ব পাওয়ার আগেই শ্রেণিকক্ষ পরিচালনা, শিশু মনোবিজ্ঞান, পাঠ পরিকল্পনা ও শিক্ষার্থীদের সুরক্ষাসহ প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পাবেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে, তবে সঠিক পরিকল্পনা ও অর্থায়ন ছাড়া কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া কঠিন হবে। বিশেষ করে প্রশিক্ষণ ফি-এর কারণে শহরের তুলনায় গ্রামের প্রার্থীরা পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য হাইব্রিড মডেলে (অনলাইন-অফলাইন) কোর্স পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
নেপের মহাপরিচালক ফরিদ আহমদ জানান, বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরিতে প্রবেশের পর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে এবার ২০২৬ সালের শুরুতে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে ‘চাকরিপূর্ব প্রশিক্ষণ’ চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ১০টি প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) ১০ মাস মেয়াদি কোর্স চালু হবে। প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহীরা নির্দিষ্ট ফি দিয়ে অংশ নিতে পারবেন, তবে ফি এখনও নির্ধারণ হয়নি।
যেসব প্রার্থী এ কোর্স সম্পন্ন করবেন, তারা প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগে কী ধরনের অগ্রাধিকার পাবেন এ বিষয়ে নীতিমালা চূড়ান্ত হলে জানা যাবে বলে জানান নেপ মহাপরিচালক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, উন্নত দেশের অনেক শিক্ষাব্যবস্থায় প্রি-সার্ভিস প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। বাংলাদেশে এটি চালু হলে শিক্ষকরা শুরু থেকেই পাঠদানে প্রস্তুত হয়ে আসবেন, ফলে শিক্ষার মান দ্রুত উন্নত হবে।
অন্যদিকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ মনে করেন, প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও প্রশিক্ষক সংকট, পাঠ্যসামগ্রী প্রস্তুতি, ব্যয়ভার এবং সময়সীমা বড় বাধা হতে পারে।
দরিদ্র প্রার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সীমিত ভর্তুকি বা স্টাইপেন্ড প্রদানের পাশাপাশি অনলাইন তত্ত্বীয় পাঠের সঙ্গে নিকটবর্তী স্কুলে ব্যবহারিক অনুশীলনের সুযোগ রাখার পরামর্শ দেন তিনি। তার মতে, শুধু সার্টিফিকেটের জন্য নয়। কার্যকর শিক্ষণ, শ্রেণিকক্ষে পর্যবেক্ষণ, ব্যবহারিক অনুশীলন এবং পরবর্তী মেন্টরিং নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডসহ বহু দেশে শিক্ষক হওয়ার জন্য প্রি-সার্ভিস প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। এসব দেশে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পাশাপাশি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন (পিজিসিই) বা সমমানের কোর্স সম্পন্ন করা হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও নানাভাবে প্রি-সার্ভিস প্রশিক্ষণ চালু আছে, তবে প্রতিটি দেশ তাদের বাজেট, মানবসম্পদ ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী নিজস্ব নীতি তৈরি করে থাকে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন