ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এর মধ্যেই এক সাধারণ শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে ‘শিবির ট্যাগ’ দেওয়ার ঘটনায় তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় একটি বেসরকারি টেলিভিশনের আয়োজিত টকশোতে ছাত্রদল মনোনীত এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ এই মন্তব্য করেন।
মুহূর্তের মধ্যেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
টকশো চলাকালে আরবি বিভাগের ২০২৪-২৫ সেশনের শিক্ষার্থী সাদিকুল ইসলাম মাসুম মায়েদকে প্রশ্ন করেন, ডাকসু নির্বাচন প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার হলেও ১৯৯০ সালের পর থেকে দীর্ঘ ২৮ বছর তা স্থবির হয়ে ছিল। এবার ছাত্রদল জয়ী হলে আবারও ডাকসু নির্বাচন দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে কি না এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি। একই সঙ্গে অতীতে গেস্টরুম ও গণরুম প্রথা চালুর বিষয়টি উল্লেখ করে প্রশ্ন করেন, নির্বাচনে জয়ী হলে কি ছাত্রদল আবারও সেই সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনবে?
প্রশ্নের জবাবে মায়েদ প্রথমে বলেন, ‘যদি প্রশ্নকারী প্রকৃত শিক্ষার্থী হন তবে তিনি দুঃখিত। তবে তার ভাষায় প্রশ্ন করার ধরন দেখে মনে হচ্ছে তিনি শিবির কর্মী এবং শিবিরের ন্যারেটিভ ব্যবহার করছেন।’ তার এই বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গেই উপস্থিত শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়া দেখান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্বতন্ত্র এজিএস প্রার্থী হাসিব আল ইসলাম মন্তব্য করেন, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ছাত্রদলের হাত ধরে আবারও ‘ট্যাগিং পলিটিক্স’ শুরু হলো।
একই সময়ে ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ মনোনীত এজিএস প্রার্থী মো. মহিউদ্দীন খান বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থীর প্রথম পরিচয় হওয়া উচিত শিক্ষার্থী হিসেবে। প্রশ্ন করলে তাকে শিবির ট্যাগ দেওয়া সংকীর্ণ মানসিকতা ছাড়া কিছু নয়। যেকোনো প্রশ্নই সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত, না হলে সহাবস্থানের পরিবেশ গড়ে উঠবে না।’
ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেন, ‘কেবল প্রশ্ন করার কারণে কাউকে ট্যাগ দেওয়া অশনিসংকেত। ফেসবুকে শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন ভূঁইয়া আরও কড়া ভাষায় লিখেছেন, “আমি যদি শিবিরও হই, তাতেই বা সমস্যা কোথায়? প্রশ্নের উত্তর দিন—গেস্টরুম ফিরিয়ে আনবেন কি না, ডাকসু বন্ধ করবেন কি না, ক্যাম্পাসে সহিংসতা করবেন কি করবেন না! জবাব না দিয়ে ট্যাগ দেওয়া মানে আসলেই জবাবদিহি এড়িয়ে যাওয়া।’
বিশ্লেষকদের মতে, ‘ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে গণতান্ত্রিক চর্চার পরিবেশ তৈরি হওয়ার কথা, সেটি ‘ট্যাগিং পলিটিক্স’ দ্বারা আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রশ্নকে সহজভাবে গ্রহণ না করে রাজনৈতিক লেবেল চাপিয়ে দেওয়া সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’
এই বিষয়ে তানভীর আল হাদী মায়েদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে বলেন, ‘বিতর্কিত মন্তব্যটি তাৎক্ষণিকভাবে করা তার পক্ষ থেকে ঠিক হয়নি। তিনি বলেছেন, বক্তৃতার শুরু ও শেষে তিনি প্রশ্নকর্তার প্রতি দুঃখপ্রকাশ করেছেন।’
মায়েদ উল্লেখ করেছেন, ডাকসু প্যানেলের ইশতেহারে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি ও জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করে ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করা হবে” এবং “নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করা হবে।’
তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘আমরা সকল অপসংস্কৃতি চিরতরে বন্ধ করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, এবং ইনশাআল্লাহ এটি বাস্তবায়িত হবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন