সাভারে বিউপি শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে এই মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ‘উই কনডেম রেপ’, ‘দ্রুততম সময়ে ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে’, ‘ধর্ষকের শাস্তি চাই’, ‘নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত কর’, ‘হ্যাং দ্য রেপিস্ট’, ‘ধর্ষক কখনো মানুষ হতে পারে না’—এ ধরনের লেখা পোস্টার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান নেন।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন বাবর বলেন, ‘আজ সাভারে বিউপি শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি আয়োজিত হয়েছে। বিগত ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনকালে দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল, যার ফলে হানাহানি, মারামারি, খুন-খারাপি এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটের এমসি কলেজে গৃহবধূকে গণধর্ষণ, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে তনুর হত্যা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা মানিক ও মুস্তাফিজের ধর্ষণের মতো ঘটনায় কোনো সুষ্ঠু বিচার হয়নি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাধারণ মানুষকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং বিচারহীনতার অবসান আশা করতে দেয়, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। বিচারহীনতার কারণে অপরাধীরা বারবার জঘন্য ঘটনা ঘটাচ্ছে, যার সর্বশেষ উদাহরণ সাভারে বিউপি শিক্ষার্থীর গণধর্ষণ। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’
শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন হাবিব হিরণ বলেন, ‘বাংলাদেশে ২০২৪ থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে ১৭ হাজার সহিংসতা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। শুধু ২০২৫ সালেই দেশে ২৫টিরও বেশি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়েছে। যদি এসব ঘটনার সঠিক বিচার, নিরপেক্ষ তদন্ত এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর ভূমিকা থাকত, তবে এমন গণধর্ষণ ঘটত না এবং ভুক্তভোগীরা ন্যায্য বিচার পেত।’
আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম ফয়সাল বলেন, ‘বাংলাদেশে এখনো সুন্দর পরিবেশ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করা সম্ভব হয়নি। আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ক্যাম্পাসের পাশেই বিউপিতে সংঘটিত গণধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং দ্রুত বিচার আইনের আওতায় এনে বিচার প্রক্রিয়াকে গতিশীল করার দাবি জানাচ্ছি।’
জাকসুতে ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী শেখ সাদি বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এক শিক্ষার্থী গণধর্ষণের শিকার হওয়ায় শুধু ছাত্রদলই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী উদ্বিগ্ন এবং অতীতের মতো সমস্ত শিক্ষার্থী এরকম জঘন্য কাজের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকবে।’
আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তানজিলা বৈশাখী বলেন, “নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাজপথে নামার দেড় বছর পরেও নারী নিরাপত্তার জন্য কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়নি। নারীর নিরাপত্তা এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরকারের নীরবতা সম্মতির লক্ষণ। পাঁচ তারিখের পর থেকেই নারীর বিরুদ্ধে অনলাইনে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, যা ‘ট্যাগিং কালচার’ হিসেবে পরিচিত।”
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনে করে, শাহবাগী ট্যাগিং, মব কালচার এবং নারীর প্রতি হেনস্তা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। ডাকসুর সময় নির্দিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে প্রকাশ্যে গণধর্ষণের হুমকি দেওয়া হলেও সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কোনো অদৃশ্য শক্তির বলয়েই নারীর নিপীড়নের ঘটনা লুকিয়ে রাখা হচ্ছে।’
অবস্থান কর্মসূচিতে যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন হাবিব হিরণের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন জাকসুতে ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী শেখ সাদি হাসান, সদস্য সচিব ওয়াসিম আহমেদ অনিক, যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম ফয়সাল, কে এম রিয়াদ, রাজন সরকার, হামিদুল্লাহ সালমান প্রমুখ।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন