মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের অর্থ বাড়িয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে অভিনব এক জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার এক সার্ভেয়ারের সঙ্গে যোগসাজশ করে একটি ছোট দোকানকে মুরগির খামার হিসেবে দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার বালিয়াটি ইউনিয়নের গর্জনা গ্রামের বাসিন্দা মো. সারোয়ার হোসেন (পিতা মৃত ইউনুস আলী) ও জেলা প্রশাসনের সার্ভেয়ার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। স্থানীয়দের দাবি, আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত জমিতে থাকা একটি মুদি দোকান ও কুড়িভুষির দোকানকে মুরগির খামার হিসেবে দেখিয়ে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে।
এ ঘটনায় গত ৯ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন এলাকার অর্ধশতাধিক বাসিন্দা। তারা অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, অধিগ্রহণের আগের দিন সারোয়ার হোসেন তার ভাইয়ের খামার থেকে কয়েকটি মুরগি এনে দোকানে রাখেন। পরদিন সার্ভেয়ারদের পরিমাপের সময় সেটিকে ‘মুরগির খামার’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। অভিযোগে আরও বলা হয়, ওই পরিমাপের পর কর্মকর্তাদের আপ্যায়নের জন্য ভোজের আয়োজন করা হয় এবং নগদ অর্থও প্রদান করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সার্ভেয়ার খোরশেদ আলম নিয়মিতভাবে একাধিক ভূমি মালিকের সঙ্গে গোপনে চুক্তি করে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কেউ রাজি না হলে তাদের জমির মাপজোখ ইচ্ছেমতো দেখিয়ে দেন।
স্থানীয় মসজিদের মুসল্লিরা জানান, দোকানে মুরগি রাখার কারণে দুর্গন্ধে নামাজ আদায়ে বিঘ্ন ঘটছে। ‘মসজিদের পাশে এমন দুর্গন্ধ সহ্য করা যায় না’ বলেন এক মুসল্লি।
জানা গেছে, সারোয়ার হোসেন মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে সহকারী নার্স হিসেবে কর্মরত। অভিযোগ রয়েছে, তিনি কর্মদিবসে ছুটিতে না থেকেও অধিগ্রহণের কাজে উপস্থিত থেকে প্রভাব খাটিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সার্ভেয়ার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা সরেজমিনে যা পাই, প্রতিবেদনে তা-ই উল্লেখ করি। ছবিসহ ভিডিও ধারণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ক্ষতিপূরণ মূল্যায়ন কমিটি চূড়ান্ত মূল্য নির্ধারণ করে।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণে অনিয়মের সুযোগ নেই। প্রতিটি জমির অবস্থান ভিডিও করে রাখা হয়। তারপরও যদি কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন