নাটোরের আকাশে আজ নেমে এসেছে ঘন বিষাদের ছায়া। আন্দোলনের পথচলায় জীবন দিয়ে দিল আরেক কিশোর। মল্লিকহাটি গ্রামের ফজর আলীর ছেলে ইয়াসিন আলী (১৬)-যার ফেসবুক প্রোফাইল ছিল লাল, যে বিশ্বাস করতো শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না-তার পোড়া মরদেহ পাওয়া গেল সাবেক এমপির ব্যক্তিগত বাসার বেডরুমে।
৪ আগস্ট নিখোঁজ হয় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইয়াসিন আলী। পরিবার ও স্বজনেরা থানায়, হাসপাতালে, বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিলেও কোথাও কোনো সন্ধান মেলেনি। অবশেষে ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় নাটোর-২ আসনের সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের ব্যক্তিগত বাসভবনের বেডরুম থেকে উদ্ধার হয় এক অজ্ঞাত দগ্ধ মরদেহ। পিতা ফজর আলী লাশটি শনাক্ত করেন-এটাই তার প্রিয় সন্তান ইয়াসিন।
ইয়াসিনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না, কোনো অপরাধের রেকর্ডও নেই। সে ছিল একজন সচেতন কিশোর, দিনমজুর পিতার সন্তান, আর সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদী কণ্ঠ। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে সে তার প্রোফাইল ছবি লাল করে দিয়েছিল। ফেসবুকে লিখেছিল-অন্যায়কারীরা যত শক্তিশালী হোক, আমরা মাথা নোয়াবো না।"
এতেই নাকি ক্ষিপ্ত হয় স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী। ইয়াসিনকে হুমকি দেওয়া হয়, মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়, এমনকি মারধরও করা হয়-এমন অভিযোগ করেছেন সহপাঠীরা ও এলাকাবাসী।
বিলাপ করতে করতে ইয়াসিনের পিতা বলেন, ‘ছেলেটা কাঠের দোকানে আমার সঙ্গে কাজ করতো, আবার খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতো। সে সব সময় বলতো, বাবা আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবো। আজ সেই কথাই তার জীবন কেড়ে নিল!’
মা রত্না বেগম কোনো কথা বলতে পারছেন না। শোকে নীরব হয়ে গেছেন। তার চোখের পানি যেন মল্লিকহাটির আকাশ-বাতাসকেই ভিজিয়ে দিচ্ছে।
ইয়াসিনের মৃত্যুতে জেলাজুড়ে শোক ও ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। শিক্ষার্থী, মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষক, সাংবাদিক এবং সাধারণ মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ‘#JusticeForYasin’ ট্রেন্ড করছে।
মানববন্ধন থেকে স্লোগান উঠেছে-‘আজ ইয়াসিন, কাল আমার সন্তান। বিচার চাই!’
২০২৪ সালের জুলাইয়ে চাকরি প্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কোটা সংস্কারের দাবিতে সারা দেশে আন্দোলন শুরু হয়। শুরুতে শান্তিপূর্ণ থাকলেও, সরকারের দমন-পীড়নে আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। এক পর্যায়ে আন্দোলন রূপ নেয় গণ-অভ্যুত্থানে, পতন ঘটে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, আন্দোলনের জের ধরেই ইয়াসিনের মতো কিশোররা হামলার শিকার হচ্ছেন।