ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

ডাকসু নির্বাচন: কাল থেকে শুরু প্রচারণা

ঢাবি প্রতিবেদক 
প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২৫, ০৯:১৫ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। ছবি -সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীরা মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) থেকে নিয়ম মেনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করতে পারবেন। 

রোববার (২৪ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত জানায় নির্বাচন কমিশন।

ডাকসু নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসার জসিম উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) থেকে প্রার্থীরা নিয়ম মেনে প্রচারণা করতে পারবেন। ছাত্রী হলগুলোতে সংশ্লিষ্ট হলের অনাবাসিক এবং অন্যান্য ছাত্রী হলের আবাসিক ও অনাবাসিক প্রার্থীরা আজ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, যেসব ভোটার/শিক্ষার্থী ভোটার তালিকায় ছবি অপ্রদর্শিত রাখতে ইচ্ছুক, তাদেরকে আগামী ২৭ আগস্টের মধ্যে চীফ রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বর্তমানে তা বন্ধ করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট হল ও দপ্তরসমূহের জন্য চূড়ান্ত ভোটার তালিকা উন্মুক্ত থাকবে।

এছাড়া, ভোট প্রদানে জটিলতা এড়াতে হল কার্ড, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড, লাইব্রেরি কার্ড বা পে ইন স্লিপ দিয়ে ভোট কেন্দ্রে ভোট দেয়া যাবে বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তারা।

ভিপি, জিএস ও এজিএসদের সাথে বসবে নির্বাচন কমিশন

আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, বড় ধরনের কোনো আচরণবিধির লঙ্ঘন এখন পর্যন্ত হয়নি। এমনটি যেন ভবিষ্যতে না হয় তা নিশ্চিত করতে চিফ রিটার্নিং অফিসার ও তার টিম কাজ করছে। অসমতা বা বৈষম্য দেখা দিলে এবং তা লিখিত দিলে কমিশন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে। 

এছাড়া মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় সকল ভিপি, জিএস, এজিএস প্রার্থীদের সাথে সিনেট হলে মিটিং করে আচরণ বিধি নিয়ে কথা হবে বলে জানানো হয়েছে।

উমামা ফাতেমার বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ

রোকেয়া হলে নিয়ম ভঙ্গ করে মধ্যরাতে অবস্থান করায় ভিপি পদপ্রার্থী উমামা ফাতেমার বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে।  

উল্লেখ্য, রোববার (২৪ আগস্ট) রাত ১টার পর উমামা ফাতেমাকে রোকেয়া হলে শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা যায়। হল প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী এক হলের নারী শিক্ষার্থী অন্য হলে প্রবেশ করতে পারে না। রাতে নির্দিষ্ট সময়ের পর নারী হলগুলোর গেট বন্ধ হয়ে যায়। সে জায়গায় রাত ১টার পর উমামা ফাতেমার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

এ নিয়ে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান সোমবার (২৫ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, উমামা ফাতেমার রোকেয়া হলে প্রবেশের ফলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও নির্বাচন কেন্দ্রীক মেয়েদের প্রবেশ শিথিল করা হয়েছে। কিন্তু সেটি শুরু হবে আগামীকাল থেকে। উমামা ফাতেমাও যদিও ক্ষমা চেয়েছেন, কিন্তু আইন অমান্য করে ক্ষমা চাইলেই তো হয় না। এটিকে স্বাভাবিক করা হয়। আশা করি নির্বাচন কমিশন এটি নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিবে। 

এদিকে সোমবার (২৫ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে উমামা দুঃখ প্রকাশ করেন। 

ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, গতকাল আমার রোকেয়া হলে প্রবেশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহল থেকে কথা তোলা হচ্ছে। আমি গতকাল কোনো নির্বাচনী প্রচার বা মিটিং করতে যাইনি। দীর্ঘদিনের মানসিক ধকলের কারণে মেন্টাল রিলিফের জন্য বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমি হলগেট ১০টায় বন্ধ হওয়ার আগেই হলে প্রবেশ করি। তাই রাত দেড়টায় আসার ব্যাপারে যে ভুয়া খবরটি ছড়ানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কেউ প্রমাণ করতে পারবে না আমি ভোট চেয়েছি।
 
তিনি বলেন, স্বতন্ত্র ইলেকশন করার কারণে তারা অযথা হ্যারেজ করছে, যারা চায়নি আমি ইলেকশনে থাকি। ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে অপরাধী সাজিয়ে ফেসবুকের কাঠগড়ায় বিচার বসানো হয়েছে। এসব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হেনস্তা নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই চালানো হচ্ছে। পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তোলা হলে আমি নিজেই রোকেয়া হলের প্রভোস্টের সঙ্গে দেখা করে কথা বলি এবং একটি এপ্লিকেশন দিই। এপ্লিকেশনের ছবি নিচে যুক্ত করেছি। যেহেতু আমি নিয়মবহির্ভূতভাবে হলে প্রবেশ করেছি তাই হল প্রশাসনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছি।

উমামা ফাতেমা আরও বলেন, তবে আজকের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এক হলের শিক্ষার্থী অন্য হলে যাওয়া কোনো ফৌজদারি অপরাধ না। নিয়মবহির্ভূত হলেও নানা সময়ে এক হলের মেয়েরা অন্য হলে বিভিন্নসময় যান। এই স্বাভাবিক প্রবণতাকে ফেসবুকের কাঠগড়ায় তুলে ক্রিমিনালাইজ করা মেয়েদের চলাচলের পরিসরকে কমানোর সামিল। আমাদের সাধারণ মেয়েরা প্রতিনিয়ত এই হেনস্তার শিকার হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯ এর ডাকসু ইলেকশনের পর এ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু ডাকসু শেষে আবার পুরোনো নিয়মেই সব ফিরে যায়। তাই বলতে পারি, আমি নির্বাচিত হলে এক হলের মেয়েরা যাতে অন্য হলে নির্বিঘ্নে যেতে পারে, তার ব্যবস্থা করব।

২১ প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দুপুর তিনটার দিকে করা সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২১ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। তবে কাদের মনোনয়ন বাতিল হবে সে তথ্য সোমবার (২৫ আগস্ট) জানানো হবে।