ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

গাজা যুদ্ধ শেষে বিয়ে করার স্বপ্ন পূরণ হলো না সাংবাদিক সালামার

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২৫, ১০:৪১ পিএম
ইসরায়েলি হামলায় নিহত আল-জাজিরার সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-সালামা। ছবি- আল-জাজিরা

দখলদার ‘ইসরায়েলি’ হামলায় নিহত আল-জাজিরার ক্যামেরাম্যান মোহাম্মদ সালামাকে নিয়ে সহকর্মী সাংবাদিকরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, তিনি ছিলেন সাহসী, ভদ্র এবং গাজার দুর্দশা বিশ্বকে জানাতে অবিচল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি সত্য প্রকাশে আপসহীন ছিলেন।

সম্প্রতি সহকর্মী সাংবাদিক হালা আসফোরের সঙ্গে বাগদান সম্পন্ন করেন সালামা। বাগদানের দিন তিনি তাকে উপহার হিসেবে দেন এক ব্যাগ রুটি। আসফোর পরে এ উপহারের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের সময় রুটির ব্যাগ ভালোবাসা, ধৈর্য এবং জীবনের প্রতীক’। গত বছর এজেপ্লাস একটি ভিডিওতে এই বক্তব্য শেয়ার করে।

এই দম্পতি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর। তারা আশা করেছিলেন, যুদ্ধবিরতি এলে নিজেদের মিলন এবং নতুন জীবনের শুরু একসঙ্গে উদযাপন করবেন। কিন্তু সেই আশা পূরণ হলো না।

আল-জাজিরার আরবি সংবাদদাতা হানি আল-শায়ের সালামার সহকর্মী ছিলেন। তিনি তাকে একজন উদার যুবক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আল-শায়ের বলেছেন, সালামা তার কাজে কখনো থামেননি বা ক্লান্ত হননি। সত্য রেকর্ড করতে তিনি সবসময় প্রস্তুত ছিলেন। বিপদের মুখেও তিনি থেমে যাননি।

সালামা বারবার ‘ইসরায়েল’-এর অপরাধ লিপিবদ্ধ করার জন্য বিপদের দিকে ছুটে গেছেন। তিনি পিছু হটেননি। জীবন ঝুঁকির মধ্যেও তিনি গাজার মানুষ ও খান ইউনিসের বাস্তবতা বিশ্বকে জানাতে থেকেছেন। সহকর্মীরা বলেন, বহুবার নিরাপদে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও তিনি শহর ছাড়তে রাজি হননি।

হানি আল-শায়ের আরও বলেন, ‘মোহাম্মদ সম্পর্কে বলার মতো উপযুক্ত শব্দ আমার নেই’। এই সংক্ষিপ্ত বাক্যে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, সালামার ত্যাগ, সাহস এবং কাজের প্রতি নিষ্ঠা কোনো শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

গাজার কঠিন সময়ের মধ্যেও মোহাম্মদ সালামা নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সাংবাদিকতার মূল দায়িত্ব সত্য প্রকাশ থেকে পিছপা হননি। তার মৃত্যু সহকর্মী এবং বন্ধুদের গভীর শোকে নিমজ্জিত করেছে। কিন্তু তার সাহসী জীবন গাজার মানুষের দুর্দশা তুলে ধরার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।

সোমবার (২৫ আগস্ট) দক্ষিণ গাজার আল নাসের মেডিক্যাল কমপ্লেক্সে ‘ইসরায়েলি’ হামলায় কমপক্ষে পাঁচ সাংবাদিকসহ ২৫ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আল-জাজিরার ক্যামেরাম্যান মোহাম্মদ সালামা অন্যতম।

অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের চুক্তিভিত্তিক সাংবাদিক হোসাইন আল মাসরি এবং এসোসিয়েট প্রেসের (এপি) সাংবাদিক মরিয়ম আবু দাগ্গা। ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইউনিয়ন মোয়াজ আবু তাহা এবং আহমাদ আবু আজিজ নামে আরও দুই সাংবাদিক নিহতের কথা জানিয়েছে।