ঢাকা মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বাকৃবি শিক্ষার্থীদের উপর শিক্ষকদের স্বজনদের হামলা, দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫, ০৭:৩৫ এএম
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা । ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বাঁচাতে তাদের স্বজনরা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করা হয়েছে। তবে, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. হেলাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এমন দাবি করা হয়।

এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে অবরুদ্ধ শিক্ষকদের স্বজন, বয়োবৃদ্ধ বাবা-মা এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাদের উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসেন। কিন্তু তাদেরকে বহিরাগত বলে প্রচার করা হচ্ছে।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ৩১ আগস্ট পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীদের 'কম্বাইন্ড ডিগ্রি'র দাবি নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিরসনে একটি জরুরি একাডেমিক কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ২৫১ জন শিক্ষকের মধ্যে আলোচনার পর ৬টি সুপারিশ সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। তবে সভার সিদ্ধান্তের পর কোনো 'স্বার্থান্বেষী মহলের' ইন্ধনে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়।

শিক্ষার্থীরা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে প্রায় ৩০০ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে তালাবদ্ধ করে জিম্মি করে রাখে। অবরুদ্ধদের মধ্যে বয়স্ক, হৃদরোগী, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং গর্ভবতী শিক্ষকরাও ছিলেন। দুপুরের প্রচণ্ড গরম ও অভুক্ত অবস্থায় শিক্ষকরা আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এতে কোনো কর্ণপাত করেনি।

বিকেলের দিকে আটকে থাকা শিক্ষকদের স্বজন ও স্থানীয় এলাকাবাসী উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় মিলনায়তনের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। একপর্যায়ে প্রায় আট ঘণ্টা পর মিলনায়তনের গেটের তালা ভেঙে অবরুদ্ধ শিক্ষকরা বের হতে সক্ষম হন। এসময় আন্দোলনকারী ছাত্ররা বাধা দিলে কয়েকজনের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয় এবং কিছু শিক্ষার্থী আহত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আহতদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, শিক্ষকদের মুক্তি দিতে আসা স্বজন বা পরিচিতদের 'বহিরাগত' হিসেবে আখ্যা দিয়ে শিক্ষার্থীদের উসকে দেওয়া হয়েছে। গেট কে ভেঙেছে, তা তদন্তসাপেক্ষ।

পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের জরুরি ভার্চুয়াল সভা ডাকা হয়। সেই সভায় বিশ্ববিদ্যালয় আইন-শৃঙ্খলা জেলা প্রশাসনের হাতে ন্যস্ত করা হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তবে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ঘটনাকে একটি 'গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ' বলে মনে করছে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে।

হল ছাড়ার নির্দেশণা মানছে না শিক্ষার্থীরা

এদিকে, হল ছাড়ার নির্দেশনা উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন হল থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে কেআর মার্কেট চত্বরের সামনে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা।

হামলার ঘটনার বিচারসহ চার দফা দাবিতে অনড় অবস্থান নিয়েছেন তারা। প্রক্টরের পদত্যাগ, ভিসির প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাসহ চার দফা দাবি জানােনা হয়। ১২ ঘন্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচির কথা জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থী মাহিদ হাসান বলেন, হল শিক্ষার্থীদের তাই আমরা হলে থাকবো। আমাদের ওপর বহিরাগতের দিয়ে হামলা করিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে হল ত্যাগের। হল ত্যাগ করে কাপুরুষের পরিচয় দিতে চাই না। আমাদের হল ছাড়তে হলে শিক্ষকদেরও ছাড়তে হবে অন্যথায় নয়।

আরেক শিক্ষার্থী যাহি হাসান যুথি বলেন, আমরা কোন ভাবেই হল ছাড়তে রাজি নই। প্রশাসন থেকে চাপ প্রয়োগ করে হল ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানাই।

ফের রেলপথ অবরোধ, ঢাকা-ময়মনসিংহ ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ

এদিকে, সোমবার বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জব্বারের মোড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রেললাইনে অবস্থান নিয়ে রেলপথ অবরোধ করেন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ওসি মো. আক্তার হোসেন বলেন, বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের একপর্যায়ে রেলপথ অবরোধ করেন তারা। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, রেলপথ অবরোধ করার কারণে ঢাকাগামী জামালপুর কমিউটার ট্রেনটি ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে ও ময়মনসিংহগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফাতেমানগর স্টেশনে আটকে আছে। এছাড়া আরও কিছু ট্রেন বিভিন্ন স্থানে আটকে আছে। শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে রেলপথ থেকে দ্রুত সরানো হবে।

যা বলছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আব্দুল আলীম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর শিক্ষকদের স্বজনরা হামলা করেছে, এমন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে কোন সিন্ডিকেট মিটিং করা যাচ্ছে না। তবে, এসব ঘটনার মুল রহস্য উৎঘাটনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার প্রক্রিয়া চলছে।