অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রাপ্ত জমি অধিগ্রহণ ও শতভাগ পরিবহন নিশ্চিতকরণের তিন দফা দাবিতে টানা ৩৬ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।
একাধিকবার আল্টিমেটাম দিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য আন্দোলন স্থগিত রাখলেও ইউজিসি-শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে সাড়া না মেলায় গণঅনশনে বসছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন- ১ এর নিচে গণঅনশনে বসেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে কিছু সময়ের জন্য বরিশাল–কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। তবে যাত্রী ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে সড়ক অবরোধ তুলে নিয়ে গণঅনশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ভাড়ায়চালিত বিআরটিসি বাস যুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনপুলে। তবে এ নিয়ে সন্তুষ্ট নয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ধাপের কাজের ফিজিবিলিটি স্টাডির জন্য প্রজেক্টের অনুমোদন পেলেও অর্থবছরের ৩ মাস চলে গেলেও চূড়ান্ত হয়নি পিডি নিয়োগ। ফলে এ বছর ফিজিবিলিটি স্টাডি হওয়া নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।
জানা যায়, তিন দফা দাবিতে গত ২৯ জুলাই মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ১৪ আগস্ট থেকে ১ সপ্তাহ বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তবে দাবি পূরণের আশ্বাস না পেয়ে গত ২৪ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত পরপর পাঁচ দিন বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেন তারা।
একইসঙ্গে, গত ২৭ আগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নির্মাণাধীন নভোথিয়েটার ভবন ও বিটাক ভবনে একাডেমিক ও আবাসিক ভবনের ব্যানার টাঙিয়ে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. তৌফিক আলমের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন সাময়িক স্থগিত করেন। তবে আল্টিমেটাম শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ইউজিসি থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা পুনরায় আন্দোলনে নামে। এরই ধারাবাহিকতায় ৩ সেপ্টেম্বর (বুধবার) শিক্ষার্থীরা ফের মহাসড়ক অবরোধ করেন।
অনশনরত গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী অমিয় মন্ডল বলেন, তিন দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে একেক পর এক কর্মসূচি দিয়ে আসছি কিন্তু ইউজিসি কিংবা শিক্ষা মন্ত্রাণালয় থেকে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। আমরা উপাচার্যের আশ্বাসের ৬ দিন কর্মসূচি বন্ধ রাখি কিন্তু কোনো ফলাফল পাইনি। তাই যাত্রী পরিবহনের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের স্বার্থে আমরণ গণঅনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শারমিলা জাহান সেজুতি বলেন, জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সড়ক অবরোধ স্থগিত রেখে আমরণ অনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমাদের দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত অনশনে থাকব।
অনশনরত শিক্ষার্থীরা হলেন- ইংরেজি বিভাগের শারমিলা জামান সেঁজুতি, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অমিয় মন্ডল, একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের তাজুল ইসলাম, রসায়ন বিভাগের মো. আবুবকর সিদ্দিক, দর্শন বিভাগের পিয়াল হাসান, লোকপ্রশাসন আহমেদ রিয়াজ, আইন বিভাগের শওকত ওসমান স্বাক্ষর প্রমুখ।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন