ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

রাকসু নির্বাচন

ছাত্রশিবিরের পরিচিতি সভার খাবার ফেরত পাঠাল নির্বাচন কমিশন

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৫, ১০:৫০ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রোজেকশন মিটিংয়ে (পরিচিতি সভা) বিতরণের উদ্দেশ্যে আনা পাঁচ বস্তা খাবার ফিরিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আজ সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হল ও খালেদা জিয়া হলে পরিচিতি সভায় বিতরণের জন্য আনা এসব খাবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে পরিচিতি সভায় অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা সন্ধ্যা সাড়ে ৮টা থেকে প্রায় ৪৫ মিনিট নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, হলের প্রজেকশন সভায় খাবার বিতরণ করা আচরণবিধি লঙ্ঘন দাবি করে গত মঙ্গলবারে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছিল। আজ সন্ধ্যায় শিবির মনোনীত প্যানেল খালেদা জিয়া হলে প্রোজেকশন সভার আয়োজন করে। এতে তারা হলে শিক্ষার্থীদের বসার জন্য বাইরে থেকে চেয়ার ভাড়া নেয়। তবে হল প্রশাসন তাদের হলের ভেতরের চেয়ার-টেবিল দিয়েই কার্যক্রম চালাতে বলে।

পরবর্তীতে সন্ধ্যা পৌনে ৮টার দিকে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের জন্য টেস্টি ট্রিট থেকে খাবার আনে প্যানেলটি। এ সময় হল ফটকে উপস্থিত হয়ে তাদের খাবার প্রবেশে বাধা দেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দসহ অন্যান্যরা। পরে তাদের ৫ বস্তায় আনা প্রায় ৮০০ প্যাকেট খাবার ফেরত পাঠানো হয়। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশন এবং হল প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মৌখিক অভিযোগ জানায় প্যানেলটির প্রার্থী ও ছাত্রশিবিরের নেতারা।

নির্বাচন কমিশনে আলোচনা শেষে পরিচিতি সভায় অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বাবু সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেল এখনো পর্যন্ত নির্বাচনের লিখিত আচরণবিধি একটিও ভঙ্গ করেনি। ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলসহ বিভিন্ন প্যানেল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আচরণবিধি ভঙ্গ করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আজকে একটি হলের পরিচিতি সভায় প্রথমেই হলের ভেতরে আমাদের চেয়ার প্রবেশ করতে দেয়নি হল প্রশাসন। পরে আমাদের সংস্কৃতির অংশ হিসেবে দাওয়াত করা অতিথিদের জন্য আনা খাবার পরিবেশন করা হয়নি। আচরণবিধিতে এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। এইভাবে একটি নির্দিষ্ট দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক ও অপেশাদার আচরণ চালু থাকলে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’

ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্মিলিত ছাত্র জোট’-এর খাবার ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সাংবাদিকদের অধ্যাপক এফ. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সব হল পরিদর্শন করেছি। খালেদা জিয়া হলে বের হওয়ার সময় গেটে দেখি, কিছু খাবারের প্যাকেট নিয়ে একজন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে জিজ্ঞেস করলে জানায়, এখানে সম্মিলিত ছাত্র জোটের একটি পরিচিতি সভা হচ্ছে। তখন আমি তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেই, এভাবে খাবার বিতরণ করা যাবে না। এরপর খাবারগুলো যেখান থেকে আনা হয়েছিল সেখানে ফেরত নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেই। আমাদের নির্দেশের পর খাবারগুলো ফেরত পাঠানো হয়।’

কেন খাবার বিতরণে বাধা দেওয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হয়তো পরিচিতি সভা করে এভাবে খাবার দেওয়ার সামর্থ্য রাখে না, কিন্তু জোটবদ্ধ প্রার্থীরা পারছে। এতে প্রার্থীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। আমরা চাই সবার জন্য সমান সুযোগ থাকুক এবং নির্বাচন আচরণবিধির মধ্যে থেকে সবাই প্রচারণা চালাক।’

তিনি জানান, ‘নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে তারা নিয়মিত হলগুলো পরিদর্শন করছেন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন। কোনো প্রার্থী নিয়মবহির্ভূতভাবে উপহার দিচ্ছে কি না বা কোনো ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’