২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ওটিটি বা ওভার দ্য টপ প্ল্যাটফর্ম সেবার জন্য সংজ্ঞা নির্ধারণের পাশাপাশি আরোপ করা হয়েছে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক। বাজেট ঘোষণার পরপরই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন দেশের দুই খ্যাতনামা নির্মাতা আশফাক নিপুন ও আদনান আল রাজীব।
সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এই বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এরপরেই সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নির্মাতাবৃন্দ।
নিজের ফেসবুক পোস্টে আশফাক নিপুন সরাসরি অর্থ উপদেষ্টার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে লেখেন, ‘বাংলাদেশে সরাসরি ওটিটি সাবস্ক্রাইবার কতজন, সে ব্যাপারে কোনো ধারণা, হালনাগাদ তথ্য কি আছে অর্থ উপদেষ্টা সাহেবের?’
তিনি যোগ করেন, ‘দেশে ওটিটির ভোক্তাকুলের একটা বেশ বড় অংশ যে পাইরেসি করে আমাদের কনটেন্ট দেখেন, সেটা কি তাঁরা জানেন? পাইরেসির বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার গল্প কি তাঁরা জানেন?’
তিনি মনে করেন, এই শুল্ক আরোপের কারণে নির্মাতারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, কমে যাবে তাদের বাজেট ও কনটেন্টের পরিসর, এবং বৈধভাবে গ্রাহক পাওয়ার সুযোগ আরও সংকুচিত হবে।

তিনি আরও লেখেন, ‘বিশ্বে বর্ধনশীল যেকোনো শিল্পকে যেখানে কর রেয়াতের সুযোগ দেওয়া হয়, সেখানে মাত্র পাঁচ বছর হলো যাত্রা শুরু করা এই ওটিটি বলয়ের ওপর বাড়তি ১০% সম্পূরক ট্যাক্সের সরাসরি প্রভাব পড়বে নির্মাতাদের বাজেটে এবং গল্পে। পাইরেসির প্রকোপ আরও বাড়বে এবং দিন শেষে সবার ব্যবসা হবে সংকুচিত।’
শুধু কর নয়, গোটা কাঠামো সংস্কার ছাড়া এই ধরনের শুল্ক আরোপ শিল্পের বিকাশকে ধ্বংস করবে বলেই মনে করেন তিনি।
তাঁর ভাষায়, ‘পাইরেসির ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নেওয়ার পরিবর্তে বরং পাইরেসিকেই উৎসাহী করবে এই বাড়তি ট্যাক্স বসানো। মাঝেমধ্যে যা-ও আমাদের কনটেন্ট গ্লোবালি বিকাশের ক্ষেত্রে একটু সম্ভাবনার আলো দেখছিল, সে আলো হয়তো আস্তে আস্তে নিভে যাবে। দুর্ভাগ্যজনক!’
ওটিটির বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আরেক নির্মাতা আদনান আল রাজীব, যিনি সম্প্রতি কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘আলী’ স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘সরকারের কাজ হলো বিনোদনশিল্পের পাশে থাকা, সহায়তা করা। কিন্তু, আমি যা দেখছি তা হলো, শিল্পকে দমিয়ে রাখা হচ্ছে; এটা সত্যিই হৃদয়বিদারক।’
রাজীব মনে করেন এই ধরনের নীতি শুধু দেশে থাকা শিল্পীদের হতাশই করে না, অনেক প্রতিভাকে দেশছাড়া করেও দেয়। তার কথায়, ‘এই কারণেই এত শিল্পী দেশ ছেড়ে বিদেশে স্থায়ী হয়ে যান।’
প্রস্তাবিত বাজেটে এই ১০ শতাংশ শুল্ক যুক্ত হওয়ায় ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর ভবিষ্যৎ উন্নয়ন নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সরকার যদি সত্যিই এই শিল্পের বিকাশ চায়, তবে প্রয়োজন সহায়তা, শুল্ক নয়। এমনটাই মনে করেন নির্মাতারা।
আপনার মতামত লিখুন :