২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সংস্কৃতি খাতে ৮২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও এতে নেই সুস্পষ্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা। এমন অভিযোগ তুলেছেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষক আনু মুহাম্মদ।
তার ভাষায়, আগের বছরের মতোই এবারও ‘পরিকল্পনা ছাড়াই’ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সংস্কৃতি খাতে, যা সংস্কৃতির গতি রুদ্ধ করে রাখবে বলেই মনে করছেন তিনি।
সোমবার বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এই বরাদ্দ ঘোষণা দেন। যদিও চলতি অর্থবছরের তুলনায় তা ৮২ কোটি টাকা বেশি, তবে মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটে এই খাতের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ।
অর্থাৎ সংস্কৃতি, তথ্য, ধর্ম ও ক্রীড়া মিলে চার মন্ত্রণালয় পেয়েছে এক শতাংশেরও কম বরাদ্দ। এতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকা ৮২৪ কোটি টাকা দিয়ে দেশজুড়ে পাঠাগার, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বা প্রশিক্ষণ অবকাঠামো তৈরির কোনো বাস্তব পরিকল্পনা নেই বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘অতীতেও যেমন পরিকল্পনা ছাড়া সংস্কৃতি খাতে বাজেট বরাদ্দ হয়েছে, এবারও তাই ঘটেছে। সংস্কৃতির সার্বিক উন্নয়ন ঘটানোর মতো কিছু নেই এই বাজেটে।’
তিনি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কৃতি খাতে মোট বাজেটের অন্তত এক শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে আসছেন।
তার মতে, ‘মানবিক সমাজ গড়তে সাংস্কৃতিক জাগরণ প্রয়োজন, অথচ সরকার সেই প্রয়োজনীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে এসে কেবল টাকার অঙ্ক বাড়াচ্ছে, দিকনির্দেশনাহীনভাবে।’
সম্প্রতি জাতীয় নাট্যশালায় অনুষ্ঠিত ‘সংস্কৃতি খাতে বাজেট পর্যালোচনা ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারেও আনু মুহাম্মদ সমালোচনার তীর ছোড়েন সরকারের সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির দিকে।
তিনি বলেন, ‘ভয় ও নিয়ন্ত্রণের আবহে সংস্কৃতিচর্চা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিল্পীদের স্বাধীন মতপ্রকাশের সুযোগ না থাকলে শিল্প কেবল আনুগত্যের হাতিয়ার হয়ে পড়ে।’
তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান শিল্পীদের নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা থেকে সরে এসে সাংস্কৃতিক পরিসরকে উন্মুক্ত করার।
এ সেমিনারে আরও অংশ নেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, যিনি ‘স্যালারি গ্রান্ট’ চালুর দাবি তোলেন নাট্যদল ও শিল্পীদের জন্য।
তিনি বলেন, ‘মিরপুর, বসুন্ধরা, বনানীর মতো জনবহুল এলাকাতেও একটি থিয়েটার হল নেই। অথচ রেস্টুরেন্ট গিজগিজ করছে। খাওয়া হয়ে উঠেছে প্রধান বিনোদন, চিন্তা ও মননের চর্চা কমে গেছে।’
শিল্পকলার দারিদ্র্যের পেছনে বাজেট নয়, দৃষ্টিভঙ্গিই প্রধান প্রতিবন্ধক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন আজাদ আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘শিল্পীদের জন্য রাষ্ট্রীয় সম্পদে অংশীদারিত্বের বোধ গড়ে না তুললে এই প্রান্তিকতা কাটবে না। বাজেট নিয়ে শুধু আলোচনা নয়, রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাবি তুলতে হবে।’
সংস্কৃতি খাত নিয়ে এই ক্ষোভ এবং অপ্রাপ্তির ভাষ্য শুধু বরাদ্দের অঙ্কে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে দৃষ্টিভঙ্গির সংকট, রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের অভাব ও সৃজনশীলতার প্রতি অব্যবস্থাপনার ছায়া।
আনু মুহাম্মদের কথায়, ‘এটা সরকারের জন্য একটি পরীক্ষা- তারা সত্যিই সংস্কৃতির উন্নয়ন চায়, নাকি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর চাপেই চলবে।’