‘শোন মহাজন, আমরা অনেকজন’- এই স্লোগানে যেদিন কোটি কণ্ঠ এক হয়েছিল, ইতিহাসের পাতায় সেই দিনটি লেখা হয় ‘৩৬ জুলাই’ নামে। আজ সেই গৌরবময় দিনের বর্ষপূর্তি। গত বছরের এই দিনে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশের মানুষ নিয়েছিল মুক্তির নিঃশ্বাস। ঠিক এক বছর পর, সেই বিজয়ের মুহূর্তকে স্মরণ করতেই রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দিনব্যাপী বিশাল আয়োজনে ‘৩৬ জুলাই উদযাপন’।

সকাল ১১টায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠান চলবে রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত। পুরো আয়োজনের পেছনে রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সহযোগিতা এবং শিল্পকলা একাডেমির সরাসরি ব্যবস্থাপনা। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানকে ঘিরে গোটা এলাকা জুড়ে এখন উৎসবের রং, গানের ছন্দ আর মানুষের ঢল।

অনুষ্ঠানের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত অংশ ঐতিহাসিক ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ, যা অনুষ্ঠিত হবে বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে। পাঠ করবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘোষণাপত্রে জাতির ভবিষ্যৎ রূপরেখা এবং গণতান্ত্রিক ধারার স্থায়িত্বের বার্তা থাকবে বলে প্রত্যাশা দেশবাসীর।
এর আগে এবং পরে মঞ্চ মাতাবে দেশসেরা শিল্পী ও সংগীতদলগুলো। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ৪টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবেশিত হবে নানা ঘরানার সংগীত - সাইমুম, কলরব, তাশফি, সায়ান, ইথুন বাবু ও মৌসুমী, সোলস, ওয়ারফেজসহ আরও অনেকেই অংশ নিচ্ছেন এই আয়োজনে। দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে উদযাপিত হয় আয়োজনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, ‘ফ্যাসিস্টের পলায়ন ক্ষণ’ উদযাপন।
সংগীতের পাশাপাশি দর্শকদের জন্য থাকবে অভিনব এক অভিজ্ঞতা - বিশেষ ড্রোন ড্রামা ‘ডু ইউ মিস মি?’, যা পরিবেশিত হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। এরপর রাত ৮টায় শুরু হবে জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেলের পরিবেশনা।

এছাড়াও থাকছে বেসিক গিটার লারনিং স্কুল, এফ মাইনর, পারশা এবং এলিটা করিমের সংগীত পরিবেশনা। প্রতিটি পরিবেশনার মাঝে নামাজ ও আজানের বিরতির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সবার শেষে থাকছে জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেলের পরিবেশনা।
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে এই ‘৩৬ জুলাই’ উদযাপন আজ আর কেবল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয় - এ যেন এক আত্মদর্শনের দিন। একটি জাতি যখন ইতিহাসকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে যায়, তখন তা উদযাপন নয়, তা হয় ভবিষ্যতের দিকে দৃঢ় প্রত্যয়।

এখানে মানিক মিয়া জুড়ে আজ শুধুই উৎসব নয়, রয়েছে প্রত্যয়, প্রতিজ্ঞা আর প্রেরণা। যে প্রেরণায় বাংলাদেশ একবার জেগেছিল, সেই প্রেরণায় আজও উচ্চারিত হচ্ছে - ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি’।
আপনার মতামত লিখুন :