বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ও নাট্যাঙ্গনের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি নিজের ব্যক্তিগত জীবন ও চিন্তাধারার একটি অন্তরঙ্গ দিক উন্মোচন করেছেন। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, পুরুষদের প্রতি তার কোনো বিরোধ নেই, যে সমাজব্যবস্থা পুরুষতান্ত্রিক তা তিনি অপছন্দ করেন।
বাঁধন বলেন, ‘আমার প্রতি প্রায়ই মানুষের ভুল ধারণা তৈরি হয় যে আমি পুরুষদের ভালোবাসি না। এটি সম্পূর্ণ ভুল। আমি অপছন্দ করি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ও যারা সেই ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যান তাদের। দীর্ঘদিন এমন মানুষদের প্রতি আমার রাগ ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বুঝেছি, এটা পুরোপুরি তাদের দোষ নয়। সমাজ, সংস্কৃতি, রাষ্ট্রই তাদের এমনভাবে গড়ে তোলে।’
তিনি তার জীবনের কয়েকজন পুরুষকে বিশেষভাবে স্মরণ করেন। প্রথমেই তার পিতা, যিনি তাকে বিভিন্নভাবে গড়ে তুলেছেন। এরপর পরিচালক সাদ, যিনি ‘রেহানা’ সিনেমার মাধ্যমে বাঁধনের ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনকে প্রভাবিত করেছেন।
এ ছাড়া তার দুই ভাইও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে ছোট ভাই রাশা, যাকে তিনি শুধু ভাইই মনে করেন না, বরং জীবনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেন। অন্য ভাইও এমন সময় পাশে দাঁড়িয়েছিলেন যখন পিতামাতার সমর্থন সম্ভব হয়নি।
বাঁধন যোগ করেন, ‘আমাদের দুই ভাই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, আইন অনুযায়ী শুধু তাদের অধিকার না ধরে সমানভাবে আমাকে উত্তরাধিকার দেন। তারা ন্যায় ও ভালোবাসার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

বাঁধন আরও বলেন, ‘আমার জীবনে এমন পুরুষরাও আছেন যারা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছেন—কেউ কেউ কষ্ট দিয়েছে, অমানবিক আচরণ করেছেন। তবুও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ, কারণ তাদের নিষ্ঠুরতা আমাকে আরও শক্তিশালী করেছে। তারা আমার প্রার্থনায় থাকবেন না, কিন্তু আমার গল্পে থাকবেন। হয়তো একদিন তারা বুঝবেন তাদের কৃতকর্ম কী প্রভাব ফেলেছে—এটাই তাদের প্রকৃত শাস্তি হবে।’
শেষে বাঁধন আরও স্পষ্ট করে জানান, ‘আমি পুরুষদের অপছন্দ করি না। আমি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ অপছন্দ করি। আর হ্যাঁ, আমি পুরুষদের ভালোবাসি।’

আজমেরী হক বাঁধনের এই ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতি তার প্রতিরোধ ও সমমনা পুরুষদের প্রতি ভালোবাসার নিখুঁত সমন্বয় তুলে ধরে। তার কথায় স্পষ্ট, একজন নারী হিসেবে সমাজের অসঙ্গতিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে হলে শুধু সমালোচনা নয়, ভালোবাসা ও ন্যায়ের শক্তিও প্রয়োজন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন