কারাগারের ধাতব দরজা পেরিয়ে আলো-হাওয়ায় ফিরেছেন ঢালিউড অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া। বিমর্ষ মুখে কাশিমপুর মহিলা কারাগার থেকে বেরিয়েই সোজা ব্যক্তিগত গাড়িতে উঠে রওনা হন বাড়ির উদ্দেশ্যে।
মঙ্গলবার (২০ মে) বেলা ৩টা ২৮ মিনিটে কারামুক্ত হন তিনি। যদিও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন না অভিনেত্রী। কারাগার থেকে বেরিয়ে নিজেকে আড়াল করে রাখেন হাত দিয়ে।
তবে বিকেল সাড়ে ৪টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি সংক্ষিপ্ত বার্তা দিয়ে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
তিনি লেখেন, ‘সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা যারা আমার পাশে ছিলেন। শারীরিক অসুস্থতার জন্য আজ কথা বলতে পারিনি। সুস্থ হয়ে খুব দ্রুত ফিরে আসব আপনাদের মাঝে।’
এই ছোট্ট বার্তাই যেন ছিল মনের অনেক না বলা কথার স্রোত। কিছুক্ষণ পর সেই পোস্টেই পরিবর্তন এনে দীর্ঘতর করে নিজের আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করেন ফারিয়া।
এবার তিনি লেখেন, ‘জীবনের সবচেয়ে মুমূর্ষু সময় পার করেছি এই দুইটা দিন। মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েছিলাম। তবে এই সময়টাতে যারা সর্বক্ষণ আমার পাশে ছিলেন সেসব মানুষদের মন থেকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। আমার সহকর্মী থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রির সবাই, এমনকি আপামর সাধারণ মানুষ যারা আমার হয়ে কথা বলেছেন, ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেছেন, পাশে থেকেছেন তাদের এই সাপোর্ট/ভালোবাসা আমি আজীবন মনে রাখব।’
তার কৃতজ্ঞতার তালিকায় আলাদা করে জায়গা পেয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরাও। লেখেন, ‘আপনারা পাশে না থাকলে হয়তো এত দ্রুত আপনাদের মাঝে উপস্থিত হতে পারতাম না। বিশেষ করে ধন্যবাদ দিতে চাই আমাদের গণমাধ্যমকর্মীদের, তাদের এই সাপোর্টটা ভীষণ দরকার ছিল। আমি সবসময় মনে রাখব আমার প্রতি আপনাদের ভালোবাসার কথা।’
এই আবেগঘন বার্তার ঠিক আগের দিন, অর্থাৎ ১৮ মে রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে থাইল্যান্ডগামী একটি ফ্লাইটে ওঠার আগে তাকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এরপর ভাটারা থানার একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে, সেখানে চলে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ। পরদিন ১৯ মে ফারিয়াকে আদালতে তোলা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক বিল্লাল ভূঁইয়া তার রিমান্ড না চেয়ে কারাগারে প্রেরণের আবেদন করেন। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে ফারিয়াকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন এবং জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন ২২ মে।
তবে ২০ মে দুপুরেই আদালতে স্পেশ্যাল পুটআপ দেওয়া হয়। শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ ইফতেখার হাসান তার মুক্তির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরলে আদালত সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং পাঁচ হাজার টাকার বন্ডে নুসরাত ফারিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন।
ফারিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি ছিল ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর ভাটারা থানাধীন এলাকায় হওয়া একটি হত্যাচেষ্টা মামলার অংশ।
এই মামলায় অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি অভিযুক্তরা আওয়ামী লীগের অর্থ সহায়তায় যুক্ত ছিলেন। বাদী এনামুল হকের দায়ের করা মামলায় শোবিজ অঙ্গনের আরও ১৬ জন তারকার নাম রয়েছে।
তবে দুই দিনের কারাবাস, আদালতের রায় এবং সামাজিক সমর্থন- সব মিলিয়ে ফারিয়ার অভিজ্ঞতা যেন জীবনের এক ভিন্ন অধ্যায় হয়ে থাকল। আর সেই অধ্যায় পেরিয়ে ফিরে এসে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অভিনেত্রী বুঝিয়ে দিলেন, লাইট-ক্যামেরার বাইরে বাস্তব জীবনেও তিনি লড়াই করতে জানেন।