ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

জসিম ও রাতুলের কবরের পাশে নিঃশব্দ প্রহরী এক বিড়াল

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৫, ১০:৩৩ পিএম
জসিম ও রাতুলের কবরের পাশে একটি বিড়াল। ছবি- সংগৃহীত

জীবনের মতোই মৃত্যুও কিছু সম্পর্ককে ছিন্ন করতে পারে না। বাংলাদেশি ব্যান্ড সংগীতের তরুণ তারকা এ. কে. রাতুলের মৃত্যু যেন কেবল মানুষের মনেই নয়, বোবা অবলা প্রাণীদের মধ্যেও গভীর রেখাপাত করেছে। এমনই এক দৃশ্য ধরা পড়েছে রাজধানীর কবরস্থানে, যেখানে রাতুলের কবরে পাহারা বসিয়েছে একটি বিড়াল।

ব্যান্ড তারকা এ. কে. রাতুল। ছবি- সংগৃহীত

গত কয়েকদিন ধরে প্রায় একই জায়গায়, একই ভঙ্গিমায় বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে সাদা-ধূসরাভ বিড়ালটিকে। কবরের একপাশে নিঃশব্দে শুয়ে থাকা এই প্রাণীটির চোখে অনুচ্চারিত এক প্রতীক্ষা, যেন কেউ ফিরে আসবে, প্রিয় কোনো সঙ্গী, যার স্পর্শে সে অভ্যস্ত ছিল, যার কণ্ঠে সে নিশ্চিন্ত ছিল। এমন নিঃশব্দ পাহারা কোনো মানুষকে দিয়েও হয়তো সম্ভব হতো না।

রাতুলের কবরের পাশে শুয়ে থাকা সেই বিড়াল। ছবি- সংগৃহীত

রাতুলের ছোট ভাই রাহুল সামাজিক মাধ্যমে জানান, কবরস্থানে এসে রাতুলের স্মৃতিতে তার পছন্দের হরলিক্স মেশানো চা খাচ্ছিলেন, ‍সঙ্গে রাতুলের জন্যও একটি কাপে চা রেখে যান তারা। সেই মুহূর্তেই দূর থেকে ছুটে আসে বিড়ালটি। ডাক দিলে সাড়া দেয়, ঘুরে ফিরে এসে বসে পড়ে ঠিক সেই কবরের গা ঘেঁষে।

রাহুল তখন বিড়ালটিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তোকে দায়িত্ব দিলাম, আমার ভাইটাকে দেখে রাখবি। তাহলে প্রতিবার ট্রিটস নিয়ে আসব।’ যেন এক অলিখিত দায়িত্বভার সঁপে দেওয়া হয় এক নিঃশব্দ পাহারাদারকে।

রাতুলের কবরের পাশে বসে থাকা বিড়াল। ছবি- সংগৃহীত

রাতুল জানান এরপর যতক্ষণ তারা ওখানে বসেছিলেন তার পুরো সময় সেই বিড়ালটি তাদেরকে সঙ্গ দেয়, ফিরে যাওয়ার সময় দেখেন পাশাপাশি অবস্থিত চিত্রনায়ক জসিম ও রাতুলের কবরের পাশে বসে আছে তাদের নব্যনিযুক্ত প্রহরী। 

এই বিড়ালটির পরিচয় নিশ্চিত না হলেও রাতুলের এক আত্মীয়া জানিয়েছেন, এটি হয়তো রাতুলেরই পোষ্য। তবে পরিচয় নয়, সম্পর্কের গভীরতাই এখানে মুখ্য। 

রাহুল ফিরে যাওয়ার সময় বিড়ালটিকে এখানে দেখেন। ছবি- সংগৃহীত

যে ভালোবাসা ভাষা বোঝে না, কেবল অনুভব করে, সেই ভালোবাসারই এক নিঃশব্দ প্রতিমূর্তি হয়ে কবরের পাশে বসে আছে একটি প্রাণ—রাতুলের ভালোবাসার প্রতীক্ষায়, কিংবা তাকে আগলে রাখার দায়ে।

মানুষের ভালোবাসা হয়তো শব্দে প্রকাশিত হয়, কিন্তু প্রাণীদের ভালোবাসা প্রকাশ পায় তাদের স্থির উপস্থিতিতে। রাতুলের কবরে বসে থাকা এই বিড়াল যেন বলে দিচ্ছে, ভালোবাসা কেবল মানুষের বিষয় নয়, এটি এক অনন্ত অনুভূতি, যা মৃত্যু পার হয়ে গিয়েও থেকেছে, নিঃশব্দে, গভীরতায়।