দীর্ঘদিন ধরেই ভালো নেই একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপির মা মরিয়ম বেগম। এক যুগ ধরে নানা রোগে আক্তান্ত তিনি। সম্প্রতি পপির মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গতকাল শনিবার (২১ জুন) রাজধানীর মগবাজার রেলগেট সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা করতে নিয়ে আসেন নায়িকার মেজো বোন ফিরোজা পারভীন খেয়ালি।
একসময় তিনিও ‘ভুল’ শিরোনামের একটি চলচ্চিত্রে নায়িকা হয়েছিলেন। পরর্বতী সময়ে অভিনয় থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন তিনি।
সরেজমিনে পপির বোন খেয়ালি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মা নানা রোগে ভুগছেন। এই ভালো, এই খারাপ। এভাবেই যাচ্ছে দিন। ডাক্তার রক্ত পরীক্ষা দিয়েছেন। সেটাই করতে এলাম। মা চিন্তায় চিন্তায় আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।’
চিন্তার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবই তো আপনারা জানেন। পপি আমাদের সম্পত্তি বেআইনিভাবে নিজের নামে করে নিয়েছেন। মাঝে খুলনা গিয়ে ঝামেলা করেছে। তার সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ সময় ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সবকিছু মিলিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করার কারণে অসুস্থতার অন্যতম একটি কারণ।’ বছরের পর বছর ‘নিখোঁজ’ পপির খবর মিলেছে চলতি বছরের শুরুর দিকে।
রূপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানে জিডি সূত্রে প্রকাশ্যে আসে পপির স্বামী আদনান উদ্দিন কামাল ও একমাত্র পুত্রসন্তান আয়াত। একপর্যায়ে স্বামী ও সন্তানের কথা শিকার করতে বাধ্য হন এই অভিনেত্রী। লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা পপির বিরুদ্ধে পৈতৃক জমি দখলচেষ্টার অভিযোগ এনে গত ৩ ফেব্রুয়ারি খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন বোন খেয়ালি।
পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসময় থাকতেন পপি। কখনো দ্বন্দ্বের আভাস পাওয়া যায়নি। তবে হঠাৎ করে চলতি বছরের শুরুর দিকে পপির পারিবারিক দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় তাই অনেকে হতবাক হয়েছেন। তাদের পারিবারিক দ্বন্দ্ব গড়িয়েছে আদালতে। এখন সেখানেই সমাধান চান তারা। পপির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছেন তার মা মরিয়ম বেগম।
তিনি বলেন, ‘পপি আমাদের কোনো খোঁজখবর নেয় না। খোঁজখবর তো দূরের কথা অনেক বছর ধরে আমার ভরণ-পোষণের দায়িত্বও পালন করে না। তা নিয়ে আমার আফসোস নেই। তবে অন্যায়ভাবে ভাই-বোনদের জমি নিজের নামে করে নিয়েছে।’ মরিয়ম বেগমের চাওয়া ভাই-বোনের প্রাপ্য হক ফিরিয়ে দেওয়া হোক। নিজের জন্য কিছুই চান না তিনি।
আড়াল হওয়ার আগে বিভিন্ন সময়ে পপি বলেছেন, ‘তিনি তার মাকে ভীষণ ভালোবাসেন। মায়ের সহযোগিতাতেই তিনি সিনেমার নায়িকা হতে পেরেছেন, এতদূর এগোতে পেরেছেন।’ যদিও মা এবং বোনের জমি দখলের অভিযোগ রীতিমতো অসত্য বলে রূপালী বাংলাদেশের কাছে দাবি করেন পপি।
তার ভাষ্য, সিনেমা করেই তার যত আয়, এর বেশির ভাগই নিয়েছেন তার মা-বাবা, ভাইবোনেরা। তিনি এতটা অসহায় হয়ে পড়েন, যখন তার কয়েক কোটি টাকা সরিয়ে ফেলা হয়। এমনকি তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে জানান। একপর্যায়ে নিজেকে বাঁচাতে হাত ধরেন আদনান কামালের। তার খারাপ সময় স্বামীই শেষ আশ্রয় দিয়েছিল বলে জানান পপি। সেই সংসারেও অশান্তির চেষ্টা চালায় মায়ের পরিবার। তা নিয়েও আক্ষেপ করেন এই নায়িকা।
১৯৯৭ সালে মনতাজুর রহমান আকবরের ‘কুলি’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গনে অভিষিক্ত হওয়া সাদিকা পারভিন পপি ২০০৩ সালে ‘কারাগার’, ২০০৮ সালে ‘মেঘের কোলে রোদ’, ২০০৯ সালে ‘গঙ্গাযাত্রা’ সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জিতেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি অসংখ্য ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন।
পপি অভিনীত মুক্তির অপেক্ষায় আছে সাদেক সিদ্দিকী পরিচালিত ‘ডাইরেক্ট অ্যাটাক’ সিনেমাটি। বেশ কয়েকবার সিনেমাটির মুক্তির খবর পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি। কবে মুক্তি পাবে তাও অজানা। অন্যদিকে, পপির কারণে আটকে আছে রাজু আলীম পরিচালিত ‘ভালোবাসার প্রজাপতি’ ও আরিফুর জামান আরিফের ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’ নামের সিনেমা দুটি।