পূর্ব শত্রুতার জেরে সম্প্রতি প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহর ভক্ত ও চলচ্চিত্র প্রযোজক মো. রাশেদুল ইসলাম রাশেদ অপহরণ ও মারধরের শিকার হয়েছেন। রূপগঞ্জ থানা পুলিশ এ ঘটনায় ইতোমধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ইউসুফগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মানববন্ধন করেন এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, প্রযোজক রাশেদের ভাতিজি সুবর্ণা আক্তারের ধর্ষণকারী ও হত্যাকারীদের ফাঁসি দিতে হবে। মানববন্ধনে রাশেদ নিজের ভাতিজির হত্যা এবং নিজের অপহরণ ও মারধরের বিচার দাবি করেন। পাশাপাশি পরিবারের নিরাপত্তাও চান তিনি।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘মাত্র ১১ বছর বয়সে সুবর্ণা ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। এরপর তাকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার কারণেই সুবর্ণার চাচাকে অপহরণ করে মারধর করা হয়েছে। এতে আমাদের জীবনও হুমকির মুখে। দেশের নানা প্রান্তে আমাদের মতো শিশুরা বারবার ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। সুবর্ণাও সেই পশুদের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি। আমরা ভয় পাচ্ছি স্কুলে আসতেও। দ্রুত সুবর্ণার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রযোজক রাশেদ বলেন, ‘আমার কোনো অপরাধ নেই, তারপরও আমাকে অপহরণ করে মারধর করা হয়েছে। অনেক বছর ধরে আমরা তাদের হয়রানির শিকার। নানা সময় হুমকি দিয়েও মামলা চালিয়ে গেছি। গত শুক্রবার আমাকে অপহরণ করে ৭০ লাখ টাকা চাঁদা চায় এবং মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। আমি অপরাধীদের শাস্তি চাই। গণধর্ষণের বিচার চাইলে কি সেটা অপরাধ? ছয়জন গ্রেপ্তার হলেও তাদের লোকজন এখনো আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, আমার এবং পরিবারের নিরাপত্তা চাই।’
রূপগঞ্জের পূর্বাচল এলাকায় গত ২৭ জুন দিবালোকেই প্রযোজক ও ব্যবসায়ী রাশেদ অপহৃত হন। পরিবারের অভিযোগের পর পূর্বাচল সেনা ক্যাম্পে জানালে অপহরণকারীরা চাপে পড়ে যায়। পরে তারা রাশেদকে ‘আওয়ামী লীগ কর্মী’ পরিচয়ে রূপগঞ্জ থানায় সোপর্দ করার চেষ্টা করে। পুলিশ দুই পক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়। অপহরণের সত্যতা মেলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে মামলা নেয় পুলিশ। অভিযুক্তরা বর্তমানে কারাগারে।
প্রযোজক রাশেদ বলেন, ‘২০১৮ সালে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় আমি বাদী হই। সেই মামলা তুলে না নেওয়ায় আমাকে অপহরণ করা হয়। বহুদিন ধরে তারা চাপ দিয়ে আসছিল। গত শুক্রবার পূর্বাচলের অফিস থেকে আমাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে ৭০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।’
রাশেদের ভাষ্য, কথিত যুবদল নেতা রাসেল আহমেদের নেতৃত্বে ৮-১০ জন যুবক তাকে অপহরণ করে। অভিযুক্ত রাসেল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে রাশেদের চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে সুবর্ণাকে অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যার মামলা রয়েছে। সেই মামলাটিই তুলে নিতে দীর্ঘদিন ধরে হুমকি দিয়ে আসছিল তারা।
রূপগঞ্জ থানা ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িত যুবদল নেতা রাসেল মিয়াসহ রাসেল, শান্ত, রনি, শিপলু, সাব্বির ও রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মেহেদী ইসলাম বলেন, ‘তাকে আওয়ামী লীগ কর্মী পরিচয়ে থানায় সোপর্দ করার চেষ্টা হলেও তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’
সালমান শাহর ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ নামে একটি শুটিং স্পট তৈরি করেছিলেন রাশেদ। সেখানে নিয়মিত নাটক-সিনেমার শুটিং হয়। তিনি ‘নিশ্চুপ ভালোবাসা’ সিনেমার প্রযোজক এবং নাটক, সিনেমা ও মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ও করেছেন। এই ঘটনায় চলচ্চিত্রপাড়ায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।