সংগীতের তাল, লয়, ছন্দের মাধুরি ছড়িয়ে দেশের অগণিত মানুষকে সুরের সমুদ্রে নিমজ্জিত করেছেন কিংবদন্তি গানের পাখি সাবিনা ইয়াসমিন। মিষ্টি সুরের যাদুকরী কণ্ঠের কারণে দেশের কোকিলকণ্ঠী গায়িকা হিসেবেও নিজেকে সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে উন্নীত করেছেন এই ‘লিভিং লেজেন্ড’। মায়াবী কণ্ঠের সুষমায় সংগীত অনুরাগীদের হৃদয়ের সবটুকু দখল করে শুধু নিজেকেই নয়, এ দেশের সংগীতকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও মাথা উঁচু করে তুলে ধরেছেন কোটি ভক্তের হৃদয়ের কম্পন, গানের পাখি সাবিনা ইয়াসমিন।
গত ৪ সেপ্টেম্বর ছিল সুরের রাণী সাবিনা ইয়াসমিনের ৭২তম জন্মদিন। শিল্পীর জন্মবার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আয়োজনে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল সংস্কৃতির আঁতুড়ঘর হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজন।
‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’ শীর্ষক একক সংগীতানুষ্ঠান, নাচ, তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা, সম্মাননা ও সংবর্ধনা প্রদানসহ জমকালো আয়োজনে সাজানো ছিল মনোজ্ঞ এই আসর।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই লেখক ও রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর শিল্পীর বর্ণাঢ্য জীবনের ওপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। তারপর শুরু হয় গানের আসর। ‘সুন্দর সুবর্ণ রূপসী লাবণ্য’ গানটির মধ্য দিয়ে সুরের ঝাঁপি খোলেন দেশীয় সংগীতের এই দিকপাল। এরপর তিনি একে একে পরিবেশন করেন- আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো, তুমি ফুলকে বলো ঝরে যেতে, শত জনমের ভাগ্য তুমি আমার জীবনে এলে সহ তার ক্যারিয়ারের কালজয়ী ও জনপ্রিয় গানসমূহ। সাবিনা ইয়াসমিনের সুরের মূর্ছনায় ঢেউ খেলে যায় গোটা মিলনায়তনে। কানায় কানায় পূর্ণ মিলনায়তনের এই আসরে শিল্পীর জাদুকরি পরিবেশনায় সুরের বৃষ্টিতে ভিজে হৃদয় শীতল করে নেন আমন্ত্রিত দর্শক-শ্রোতারা। প্রতিটি পরিবেশনার পর গানের পাখির প্রতি বিমোহিত দর্শক-শ্রোতাদের আবেগময় অনুরোধে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন বাংলাদেশের সংগীত কিংবদন্তি সাবিনা ইয়াসমিন। আর অনুরোধে আপ্লুত এই গানের পাখিও একের পর এক অনুরোধ রক্ষা করেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে ‘গীতিময় সেই দিন চিরদিন আর এলো না’ গানটির সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা। এর আগে, অনুষ্ঠানের শুরুতে শিল্পীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন এবং তার হাতে সম্মাননা তুলে দেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ, সংস্কৃতি সচিব মো. মফিদুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ এবং শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন।
দেশবরেণ্য শিল্পীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুরশীদ আলম, খন্দকার রফিকুল আলম, আবিদা সুলতানা, নকীব খান, আগুন, পার্থ বড়ুয়া প্রমুখ।
পরিকল্পনা বিষয়ক উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বাংলা গান মানেই আবেগ, স্মৃতি আর হৃদয়স্পর্শী সুরের এক অনন্ত ভুবন। সেই ভুবনে যদি কারও কণ্ঠ অনায়াসে শ্রোতার হৃদয় ছুঁয়ে যায়, তবে নিঃসন্দেহে তিনি সাবিনা ইয়াসমিন। অর্ধশতকেরও বেশি সময় ধরে সংগীতের আকাশে তার কণ্ঠ ভেসে এসেছে- কখনো চলচ্চিত্রের পর্দাজুড়ে, কখনও বেতার-টেলিভিশনের সুরে, আবার কখনো মানুষের দৈনন্দিন জীবনের মধুর সঙ্গী হয়ে।’
স্বাগত বক্তৃতায় সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘যার গান শুনে শুনে আমরা সময়ের সঙ্গে আগামীর পথে হেঁটেছি, যার গান প্রাণে শিহরণ এনেছে, আপ্লুত করেছে, অভিভূত করেছে- তিনি বাংলা গানের পাখি সাবিনা ইয়াসমিন। স্বনামখ্যাত এই গুণী শিল্পীকে সম্মাননা প্রদান করতে পেরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় গর্বিত ও আনন্দিত।’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন অভিনেতা ও নির্মাতা আফজাল হোসেন।