নওগাঁ সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত ফি নেওয়ার প্রতিবাদ করায় কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জুনায়েদ হোসেন জুনের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে কলেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এর আগে কলেজের সেন্ট্রাল মাইকে হামলার জন্য ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘটনার পর থেকে জুনায়েদ হোসেন জুন কলেজের মূল ফটকের সামনে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অবস্থান নেন। কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সামসুল হক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে গতকাল রোববার থেকে আগামী রোববার ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভর্তির সময়। যেখানে নিয়মিত ছাত্রদের জন্য ৩ হাজার ৪৯১ টাকা এবং ছাত্রীদের জন্য ৩ হাজার ২৫১ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া যেসব শিক্ষার্থীর পাঠ বিরতি আছে তাদের জন্য আরও ১৫০ টাকা বাড়তি দিতে হবে।
স্থানীয় ও শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, ভর্তি প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কলেজের ভর্তি শাখায় গিয়ে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলেন কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জুনায়েদ হোসেন জুন। পরে অধ্যক্ষ প্রফেসর সামসুল হক ও অন্য শিক্ষক ও কর্মচারীরা তাকে বুঝিয়ে কলেজ চত্বরে নিয়ে আসেন। এ সময় তার ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে মারধর করে কলেজ প্রশাসন (কলেজের স্টাফ)। তবে মারধরের আগে কলেজের সেন্ট্রাল মাইকে ঘোষণা করা হয়, কলেজের এক কর্মচারীকে কেউ মারধর করছে। ঘোষণা দেওয়ার পর কলেজ প্রশাসনের ১৫-২০ জনের একটি দল জুনায়েদ হোসেনের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করে। ঘটনার পর থেকে জুনায়েদ হোসেন হামলার বিচারের দাবিতে কলেজের মূল ফটকের সামনে অবস্থান করেন। এ ছাড়া ঘটনার পর ছাত্রদলের নেতারা ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
হামলার ঘটনার বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা হামলার ঘটনার প্রতিবাদ এবং বিচার দাবিতে বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র বলেন, কলেজের কলা ভবনের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় এক কর্মচারীকে মারধর করা হচ্ছে। কলেজ চত্বরে শহিদ মিনারের পাশে মারধরের হইচই শোনা যাচ্ছিল। পরে দেখি জুনায়েদ হোসেন ভাইকে মারধর করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী জুনায়েদ হোসেন জুন বলেন, ‘কলেজে একাদশ শ্রেণি ভর্তিতে অতিরিক্ত ফি নেওয়া হচ্ছিল, যা পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর তুলনায় প্রায় এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে কলেজ প্রশাসনকে ফি কমানোর অনুরোধ করেছিলাম। তারা বিষয়টা বিবেচনায় নিতে চায়। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে বলা হয়। পরে অধ্যক্ষ স্যার আমাকে নিয়ে কলেজে চত্বরে শহিদ মিনারের দিকে নিয়ে আসেন। এ সময় মাইকে ঘোষণা দিয়ে কলেজ প্রশাসন (কলেজের স্টাফ) আমার ওপর স্ট্যাম্প, বাঁশ এবং লাঠিসোটা দিয়ে হামলা করে। এ ঘটনায় অধ্যক্ষসহ অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি করছি।’
নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সামসুল হক বলেন, কলেজের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ বছর ৫০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা থেকে কর্মচারীদের বেতন পরিশোধসহ গরিব শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জুনায়েদ ভর্তি শাখায় কক্ষে গিয়ে বসে ছিল এবং অতিরিক্ত ফি নেওয়া হচ্ছে বলে সে জানায়। যেহেতু ওই কক্ষে মূল্যবান কম্পিউটারসহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি ছিল। সেখানে বিশৃঙ্খলা হতে পারে জন্য প্রথমে তাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলি। সে কোনোভাবেই আমাদের কথা শুনছিল না। তখন কর্মচারীরা যেভাবেই হোক বের করে দিয়েছে। আমি শুনেছি, কর্মচারীদের সঙ্গে তার হাতাহাতি হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। মারধরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে জানান তিনি।’