গাছে কলম করা একটি প্রচলিত উদ্ভিদপ্রজনন প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে এক গাছের ডাল থেকে নতুন গাছ তৈরি করা যায়। কলম করার ফলে নতুন গাছটি মূল গাছের সকল গুণাবলী ধারণ করে এবং দ্রুত ফল দেয়। গুটি কলম পদ্ধতি গার্ডেনিং পছন্দ করা মানুষের কাছে জনপ্রিয়।
গুটি কলমের ধাপসমূহ-
১। উপযুক্ত সময় নির্বাচন
বর্ষাকাল বা বর্ষার শুরুর দিক (জুন-আগস্ট) গুটি কলমের জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময়।
তখন বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে, ফলে শিকড় গজানোর সম্ভাবনা বেশি।
২। উপযুক্ত ডাল নির্বাচন
স্বাস্থ্যবান, পরিণত কিন্তু খুব বেশি পুরনো নয়- এমন একটি ডাল বেছে নিন।
ডালটি যেন অন্তত ১ ফুট লম্বা এবং কিছুটা নমনীয় হয়।
৩। বাকল কেটে পরিষ্কার করা
নির্বাচিত ডালে প্রায় ১ ইঞ্চি প্রস্থের একটি বৃত্তাকার রেখায় ছুরি দিয়ে গাছের বাকল (ছাল) কেটে ফেলুন।
ওই অংশের সবুজ স্তর (ক্যাম্বিয়াম) যেন পুরোপুরি উঠে যায়, তা নিশ্চিত করুন।
৪। মাটি প্রস্তুত ও প্রয়োগ
এক মুঠো ভিজা পচা পাতার মাটি, নারিকেলের ছোবড়া বা বেলে দোঁআশ মাটিকে গুটির মতো করে কাটা অংশে জড়িয়ে দিন।
চাইলে রুটিং হরমোন পাউডার ব্যবহার করতে পারেন শিকড় গজানোর হার বাড়াতে।
৫। পলিথিনে মোড়ানো
মাটিযুক্ত অংশটি পলিথিন বা প্লাস্টিক দিয়ে ভালোভাবে মুড়িয়ে দিন যেন পানি না ঢোকে এবং ভেতরের আর্দ্রতা বজায় থাকে।
উভয় প্রান্তে সুতো বা রাবার ব্যান্ড দিয়ে শক্তভাবে বেঁধে দিন।
৬। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ
২–৪ সপ্তাহ পর দেখতে পাবেন গুটির ভেতর সাদা শিকড় বের হতে শুরু করেছে।
এ সময়ের মধ্যে পলিথিন খুলে বা না খুলেই ভেতরের আর্দ্রতা ঠিক আছে কিনা দেখে নিতে পারেন।
৭। কাটার সময় ও রোপণ
পর্যাপ্ত শিকড় গজালে (সাধারণত ৪-৬ সপ্তাহ পর), গুটি অংশের নিচে ছুরি দিয়ে কেটে আলাদা করে ফেলুন।
কাটার পর গাছটিকে ছায়াযুক্ত জায়গায় মাটিতে বা টবে রোপণ করুন।
প্রথম দিকে নিয়মিত পানি দিতে হবে এবং সরাসরি রোদ থেকে দূরে রাখতে হবে।
যেসব গাছে গুটি কলম উপযোগী
আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, জাম, কমলা, বেল, লেবু, ডালিম।
গুল্মজাত ফুলের গাছ (যেমন – রজনীগন্ধা, চামেলি)
সতর্কতা
যন্ত্রপাতি অবশ্যই জীবাণুমুক্ত ব্যবহার করুন।
মাটি যেন অত্যধিক ভিজা বা শুকনো না হয়।
গুটি কাটার সময় গাছের বেশি ক্ষতি করবেন না।
আপনার মতামত লিখুন :