বাচ্চা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক প্রায় সবাই চকলেট খেতে পছন্দ করে। কিছু ক্ষতিকর দিক থাকার কারণে অন্যান্য চকলেট খেতে নিষেধ করা হলেও ডার্ক চকলেট খাওয়ার পরামর্শ দেন অনেকে।
ডার্ক চকলেট ও চকলেট এর মধ্যে পার্থক্য কি?
ডার্ক চকলেটে মিল্ক চকলেটের তুলনায় অনেক বেশি কোকো থাকে । ডার্ক চকলেটে প্রায় ৫০-৯০% কোকো থাকতে পারে, যেখানে মিল্ক চকলেটে মাত্র ১০-৫০% কোকো থাকে। কোকোর শতাংশের পার্থক্য উভয়ের স্বাদের জন্য দায়ী। ডার্ক চকলেট সাধারণত মিষ্টি স্বাদের মিল্ক চকলেটের তুলনায় বেশি তেতো হয়।
ডার্ক চকলেটের প্রধান উপাদান
কোকো সলিডস:কোকো সলিডস চকলেটের মূল অংশ। যেখানে থাকে কোকো মাস ও কোকো পাউডার। ডার্ক চকলেটে কোকো সলিডের পরিমাণ সাধারণত ৫০% থেকে ৯০% পর্যন্ত হতে পারে। কোকোতেই রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্ল্যাভোনয়েড।
কোকো বাটার: কোকো বিন থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক চর্বি, যা চকলেটকে মসৃণ ও গলে যাওয়ার মতো করে তোলে।
চিনি: স্বাদ বাড়াতে পরিমাণমতো চিনি ব্যবহার করা হয়, তবে মিল্ক চকলেটের তুলনায় ডার্ক চকলেটে অনেক কম থাকে।
লেসিথিন: সাধারণত সয়াবিন থেকে তৈরি একধরনের ইমালসিফায়ার, যা চকলেটের উপাদানগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
ভ্যানিলা বা ভ্যানিলিন: স্বাদ বৃদ্ধির জন্য কখনো কখনো প্রাকৃতিক ভ্যানিলা বা কৃত্রিম ভ্যানিলিন যোগ করা হয়।
ডার্ক চকলেট শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টিগুণেও সমৃদ্ধ। তবে এটি পরিমাণমতো খাওয়া উচিত।
ডার্ক চকলেটের পুষ্টিগুণ (প্রতি ১০০ গ্রামে):
ক্যালরি:৫৫০-৬০০ কিলোক্যালরি।
প্রোটিন:৭-৮ গ্রাম।
চর্বি: ৪২-৪৫ গ্রাম (এর মধ্যে স্যাচুরেটেড ২৪+ গ্রাম)।
কার্বোহাইড্রেট: ৪৫-৫০ গ্রাম।
আঁশ:১০-১২ গ্রাম।
আয়রন: দৈনিক চাহিদার ৬৭-৮০%।
ম্যাগনেশিয়াম: ২৩০-২৮০ মিলিগ্রাম (৬০-৭০%)।
তামা: ৮৯-৯০%।
ম্যাংগানিজ: ৯৮-১০০%।
ফ্ল্যাভোনয়েডস: শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
ডার্ক চকলেট কত প্রকার?
চকোলেটের প্রধানত তিন প্রকার - সাদা চকোলেট, দুধ চকোলেট এবং ডার্ক চকোলেট । প্রত্যেকেরই নিজস্ব পছন্দের, পছন্দের স্বাদ থাকে।
সবচেয়ে জনপ্রিয় চকলেট কোনটি?
মিল্ক চকলেট সবচেয়ে জনপ্রিয়, ৪৯% আমেরিকানদের পছন্দের। এর আকর্ষণ এর মসৃণ গঠন এবং ক্লাসিক স্বাদের মধ্যে নিহিত। স্বাস্থ্যকর উপকারিতা এবং সমৃদ্ধ স্বাদের কারণে ডার্ক চকলেটের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাদা চকলেট কম জনপ্রিয়, মাত্র ১১% আমেরিকান এটি পছন্দ করেন।
ডার্ক চকলেট শুধু একটি স্বাদের খাবার নয়, বরং পরিমিত পরিমাণে খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ কিছু উপকার বয়ে আনে। নিচে ডার্ক চকলেটের প্রমাণিত উপকারিতাগুলো তুলে ধরা হলো:
ডার্ক চকলেটের উপকারিতা
হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে- ডার্ক চকলেটে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস রক্তনালীর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত পরিমিত সেবনে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়- কোকোতে থাকা ক্যাফেইন ও থিওব্রোমিন সাময়িকভাবে মনোযোগ বাড়ায়। রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে স্মৃতিশক্তি ও মানসিক ফোকাস উন্নত করতে সাহায্য করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর- ডার্ক চকলেটে থাকা পলিফেনল, ফ্ল্যাভোনল ও ক্যাটেচিন কোষের ক্ষয় রোধ করে। এটি বয়সজনিত নানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে- কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ডার্ক চকলেট টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
মুড ভালো করে- ডার্ক চকলেট খেলে সেরোটোনিন ও এন্ডরফিন নিঃসরণ বাড়ে, যা মানসিক চাপ কমায় ও ডিপ্রেশন দূর করতে সাহায্য করে।
আয়রন ও ম্যাগনেশিয়ামের ভালো উৎস- ডার্ক চকলেট রক্তস্বল্পতা বা ক্লান্তিতে ভোগা মানুষদের জন্য উপকারী।
ডার্ক চকলেট স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে কিছু অপকারিতা দেখা দিতে পারে।
ডার্ক চকলেটের অপকারিতা
অতিরিক্ত ক্যালোরি ও ওজন বৃদ্ধি- ডার্ক চকলেটে চিনি ও চর্বি থাকে, ফলে বেশি খেলে সহজেই ওজন বেড়ে যেতে পারে।
ঘুমের ব্যাঘাত- ডার্ক চকলেট থাকে ক্যাফেইন ও থিওব্রোমিন, যা উত্তেজক। রাতে বেশি খেলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে- কিছু মানুষের জন্য ডার্ক চকলেট একটি মাইগ্রেনের ট্রিগার হতে পারে, বিশেষ করে কোকোতে থাকা কিছু রাসায়নিক উপাদানের কারণে।
অম্বল বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা- ডার্ক চকলেট পেটের অ্যাসিড বাড়িয়ে অম্বল, বুকজ্বালা বা গ্যাস্ট্রিক তৈরি করতে পারে।
আয়রনের শোষণে বাঁধা- ডার্ক চকলেটে থাকা কিছু পলিফেনল ও ট্যানিন শরীরে আয়রনের শোষণ হ্রাস করতে পারে, বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই রক্তস্বল্পতা আছে।
চিনি ও অ্যাডিটিভ ঝুঁকি- নিম্নমানের ডার্ক চকলেটে অনেক চিনি, কৃত্রিম ভ্যানিলিন বা প্রিজারভেটিভ থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :