ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫

বিড়াল পালনের উপকারিতা ও অপকারিতা

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২৫, ০৭:২৪ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

বিড়াল একটি জনপ্রিয় পোষা প্রাণী। তবে বিড়াল পালার আগে এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো জানা অত্যন্ত জরুরি। আবেগের বশে বিড়াল বাসায় আনা অনেক সময় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তাই আগে জেনে নেওয়া দরকার বিড়াল পালনের ভালো-মন্দ দিকগুলো।

বিড়াল পালনে যেমন উপকারিতা আছে, পাশাপাশি আছে অপকারিতাও। আসুন জেনে নেওয়া যাক বিড়াল পালনের কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে... 

বিড়াল পালনের উপকারিতা

১. পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়াল আমাদের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়। বিড়াল অপছন্দ করেন- এমন মানুষ আমাদের আশেপাশে অনেক কমই আছেন। বর্তমান সময়ে মানুষের মধ্যকার সম্পর্কগুলো অনেকটা আবেগহীন যান্ত্রিক হয়ে উঠেছে।

এ সময়ে পোষা প্রাণী আমাদের মানসিকভাবে শান্তি দেয়। আমাদের বন্ধু হয়ে ওঠে। আমাদের মন খারাপের সময় বিড়াল পাশে এসে বসে সান্ত্বনা দিয়ে থাকে। তার আদুরে মুখ আমাদের উজ্জীবিত করে তোলে।

বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত বিড়াল আমাদের ডিপ্রেশন-স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। ঘরে বিড়াল পুষলে সে শুধু আপনার একাকিত্ব দূর করবে না, বরং আপনার অর্থ সাশ্রয়েও সহযোগিতা করবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বিড়াল পোষে তারা অনেক ক্ষেত্রেই অন্যদের চেয়ে সুস্থ্ জীবনযাপন করে।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বিড়ালের সঙ্গ মানুষের স্বাস্থ্যের যোগ রয়েছে। যেমন- যদি আপনার একটি বিড়াল থাকে, তাহলে আপনি অন্যদের চেয়ে কম একাকিত্বে ভুগবেন। বিড়াল খুবই আদুরে প্রাণী। তাদের সঙ্গে বন্ধন নানাভাবে সাহায্য করবে আপনাকে। যারা কোনো সম্পর্কে জড়াননি, একাকিত্ব বোধ করছেন- তারা বিড়াল পুষতে পারেন। সঙ্গী হিসেবে বিড়াল চমৎকার।

২. গবেষণা বলছে, বিড়ালের উপস্থিতিতে ঘুম আরও ভালো হয়। মায়োক্লিনিক সেন্টার ফর স্লিপ মেডিসিনের পরামর্শ অনুযায়ী, ঘুমের সঙ্গী হিসেবে বিড়ালকে রাখতে পারেন।

৩. ২০০২ সালে ন্যাশনাল হেলথ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এক বছরের নিচের যেসব শিশু বিড়ালের প্রেমে মগ্ন থাকে; তাদের বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা কম।

৪. বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত আছে, বিড়াল ঘরে থাকলে অশুভশক্তি বা আত্মা সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। রাশিয়ার গ্রামাঞ্চলে বিশ্বাসটি এখনো প্রচলিত আছে।

৫. অটিস্টিক শিশুদের জন্য বিড়াল হতে পারে দারুণ কিছু। বিড়াল কেবল এই ধরনের শিশুদের সঙ্গই দেবে না, তাদের চিকিৎসাক্ষেত্রেও সহায়তা করবে।

অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ও কার্যকরী একটি মাধ্যম হচ্ছে বিড়াল। কারণ বিড়ালটি এই শিশুদের সঙ্গে খেলবে সারাদিন।

৬. বিড়ালকে প্রতিদিন আপনার হাঁটাতে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। 

৭. বিড়াল একা থাকতে পারে। ফলে আপনি আপনার বিড়ালকে যদি বাসায় পর্যাপ্ত খাবার দিয়ে বাইরে যান সে কোনো সমস্যা ছাড়াই থাকতে পারবে। 

৮. বিড়াল খেলতে খুব পছন্দ করে। যদিও তারা দিনের বেশির ভাগ সময় ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়, তবু যতটুকু সময় জেগে থাকে তারা খেলতে থাকে এবং খেলতে অনেক ভালোবাসে। 

৯. ২০০৮ সালের এক গবেষণা অনুসারে, কুকুরের তুলনায় বিড়াল অনেক কম খাবার খায়। তা ছাড়া ঘর থেকে ইঁদুর তাড়ায় বিড়াল।

বিড়াল পালনের অপকারিতা

১. বিজ্ঞানীরা এমন একটি পরজীবী জীবাণু খুঁজে পেয়েছেন, যা থেকে মানুষ সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আশঙ্কার বিষয় হলো বেশির ভাগ বিড়ালের শরীরেই এই জীবাণু থাকতে পারে।

ফলে পোষা বিড়ালের কাছ থেকেই এমন মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে শিশু-কিশোরদের। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে পিটিআই এ খবর জানিয়েছে।

‘টক্সোপ্লাজমা গনডি’ নামের এই পরজীবী জীবাণুটি প্রায় সব বিড়ালের শরীরেই বাসা বাঁধতে পারে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে টেক টাইমস। মানুষের মধ্যে সহজে এই ‘টক্সোপ্লাজমা গনডি’ জীবাণুর উপসর্গগুলো ধরা পড়ে না বলে প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগ শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।

স্ট্যানলি মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক ই ফুলার টোরি এই গবেষণার প্রেক্ষিতে বিড়াল পোষার বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। পোষা বিড়ালকে বাড়ির মধ্যেই আবদ্ধ রাখার চেষ্টা করা, বিড়ালের পরিচ্ছন্নতায় মনোযোগ বাড়ানো এবং বিড়ালের থাকার জায়গা বা বিড়ালের খেলার বালির বাক্স ব্যবহারের সময়টুকু ছাড়া বাকি সময় ঢেকে রাখলে ‘টক্সোপ্লাজমা গনডি’ জীবাণুর বিস্তার রোধ করা যেতে পারে।

২. বিড়াল যেহেতু খেলা করতে অনেক ভালোবাসে, তাই তাকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া দরকার হয়ে ওঠে। সে আপনার সঙ্গে খেলতে ভালোবাসলে দিনের একটা সময় তার জন্য রাখা লাগবে। 

৩. লিটার বক্স পরিষ্কার রাখাও অনেক ঝামেলার একটি কাজ বলা যায়। বিড়াল অত্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন প্রাণী হওয়ায় তারা তাদের লিটার বক্স পরিষ্কার না থাকলে সেখানে পি-পটি করতে চায় না। ফলে আপনাকে সতর্কতার সঙ্গে দিনে প্রায় ৩-৪ বার লিটার বক্স পরিষ্কার করতে হবে। 

৪. বিড়াল পালা কুকুরের থেকে কম ব্যয়বহুল হলেও যথেষ্ট টাকা খরচ হয়। কেননা ভালোমানের ক্যাটফুড তাদের খাওয়ানো উচিত। এতে বেশ বড় একটা অঙ্ক ব্যয় করা লাগে। এ ছাড়াও ভেটেরিনারি খরচ আছে। ভ্যাক্সিনেশনের খরচও রয়েছে। 

৫. বিড়াল পালনের আগে সবার একটা মেজর সমস্যা সম্পর্কে জানা থাকে না। যার ফলে পরবর্তীকালে তারা এই সমস্যার জন্য অনেক বিপদে পড়েন। সমস্যাটি হলো বিড়ালের লোম। বিড়ালের অনেক লোম ঝরে। ফলে আপনার বাসার প্রায় সব জায়গায় দেখবেন যে বিড়ালের লোম।

আর আপনার যদি পার্শিয়ান ব্রিডের বিড়াল হয় বা এমন ব্রিড যাদের লোম অনেক বড়, তাহলে আপনার সারা বাসায় তাদের লোম থাকবে, এমনকি অনেক সময় খাবারেও থাকে।

আপনার এমন কোনো পোশাক থাকবে না, যেটায় লোম নেই। তবে এই সমস্যার সমাধান পেতে হলে আপনাকে প্রচুর সময় খরচ করে লোম পরিষ্কার করতে হবে। তাদের বিভিন্ন সাপলিমেন্ট বা ভিটামিন খাওয়ানো যেতে পারে। এতে তাদের লোম পড়া কমবে।

৬. বিড়াল পালনের আরেকটি বড় সমস্যা হলো তারা ফার্নিচার স্ক্র্যাচ করে। ফলে আপনার ফার্নিচারে তাদের নখের আঁচড়ের দাগ পাবেন।