ঢাকা শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫

বিমান থেকে ইজেক্ট করার পর পাইলটের সঙ্গে যা ঘটে

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০২৫, ০৭:২৫ পিএম
যুদ্ধবিমান নিয়ন্ত্রণ হারালে পাইলট ‘ইজেকশন সিট’ ব্যবহার করে দ্রুত বিমান থেকে বের হয়ে যান। ছবি- এআই দিয়ে তৈরি

যুদ্ধবিমান চালানো একদিকে গর্বের, অন্যদিকে ভয়ংকর ঝুঁকির কাজ। মুহূর্তের ভুল বা যান্ত্রিক ত্রুটিতে ঘটে যেতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। 

এমন পরিস্থিতিতে পাইলটের শেষ ভরসা হয়ে ওঠে ‘ইজেকশন সিট’। এটি পাইলটকে যুদ্ধবিমান থেকে দ্রুত উৎক্ষেপণ করে প্রাণ বাঁচানোর সুযোগ দেয়। 

তবে প্রাণ রক্ষা পেলেও শরীরে পড়ে তীব্র ধাক্কা, বিশেষ করে মেরুদণ্ডে মারাত্মক চোট লাগে। আর এরপর শুরু হয় দীর্ঘ চিকিৎসা, পুনর্বাসন আর মানসিক যন্ত্রণার লড়াই।

ইজেকশন: জীবন বাঁচানোর জরুরি প্রযুক্তি

যখন কোনো যুদ্ধবিমান নিয়ন্ত্রণ হারায় কিংবা বিপদের মুখে পড়ে তখন পাইলট ইজেকশন সিটের সাহায্যে নিজেকে বিমান থেকে উৎক্ষেপণ করেন। এতে একটি শক্তিশালী রকেট ইঞ্জিনের মাধ্যমে পাইলটকে ককপিট থেকে ১০০-২০০ ফুট ওপরে ছুড়ে ফেলা হয়। এরপর একটি প্যারাসুট খুলে ধীরে ধীরে পাইলটকে মাটিতে নামিয়ে আনে।

প্রক্রিয়াটি প্রাণরক্ষাকারী হলেও শরীরের ওপর এর প্রভাব ভয়াবহ। বিশেষ করে মেরুদণ্ডে চাপ এবং আঘাত এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, যা পঙ্গুত্ব পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।

চরম চাপ ও জি-ফোর্সের ধাক্কা

সাবেক এয়ার ফোর্স ফাইটার লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিট স্মিথ জানিয়েছেন, ইজেকশনের মুহূর্তে শরীর ১৪ থেকে ১৬ গুণ বেশি গ্র্যাভিটির চাপ (জি-ফোর্স) সহ্য করে।

এই তীব্র ধাক্কা অনেক সময় মেরুদণ্ডে ফাটল বা ফ্র্যাকচারের সৃষ্টি করে। এমনকি পাইলটদের পিঠে দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা তৈরি হয়, যা স্বাভাবিক চলাফেরাতেও বাধা সৃষ্টি করে।

উচ্চতা ও ঝুঁকির সম্পর্ক

উচ্চতা ইজেকশনের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উচ্চ জায়গা থেকে ইজেক্ট করলে প্যারাসুট খোলার যথেষ্ট সময় থাকে। কিন্তু নিচু উচ্চতা থেকে ইজেক্ট করলে প্যারাসুট খোলার সময় পাওয়া যায় না।

এতে মাটিতে তীব্র গতিতে পতনের ফলে ঘটে যেতে পারে ‘বার্স্ট ফ্র্যাকচার’। এই ধরনের ইনজুরিতে মেরুদণ্ড এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে, পাইলট হাঁটতে বা দাঁড়াতে পারেন না। অনেক সময় পা অবশ হয়ে যায়। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

ইজেকশনের পর শুরু হয় পুনর্বাসনের লড়াই

ইজেকশনের পর বেশিরভাগ পাইলটেরই মেরুদণ্ডে আঘাত লাগে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ পাইলট মেরুদণ্ডে মারাত্মক ব্যথা, ফ্র্যাকচার বা স্পাইনাল চোট পান। দাঁড়ানো, হাঁটা, বসা সবকিছুতেই সমস্যা দেখা দেয়।

এই কারণে এমআরআই, সিটি স্ক্যান করে চোট নির্ণয় করতে হয় এবং প্রয়োজনে শুরু হয় দীর্ঘ ফিজিওথেরাপি।

মেরুদণ্ডের কোর মাসল ও প্যারাস্পাইনাল মাসল শক্তিশালী করার জন্য বিশেষ অনুশীলন করানো হয়। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে আবার উড়তে পারবেন কি না তা নির্ধারণ করতে হয় বিভিন্ন ফিটনেস টেস্টের মাধ্যমে।

মানসিক ট্রমা ও সাহসের পরীক্ষা

শারীরিক যন্ত্রণার পাশাপাশি মানসিক চাপও থাকে প্রকট। অনেক পাইলটই এই দুর্ঘটনার পরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

ট্রমা, হতাশা, ঘুমের সমস্যা, এমনকি উড়তে না পারার ভয় তাদের আচ্ছন্ন করে ফেলে। তবে অনেকে ধৈর্য, সাহস এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আবারও ফিরে আসেন কর্মজীবনে।

ইজেকশন: দ্বিতীয় জীবনের শুরু

ইজেকশন মানে শুধু জীবন বাঁচানো নয়, এটা এক ধরনের দ্বিতীয় জন্ম। সেই জন্ম শুরু হয় যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে, যা কেবল চিকিৎসা দিয়ে নয়, মানসিক শক্তি, সময় এবং সাহস দিয়ে মোকাবিলা করতে হয়।

এই যুদ্ধ আকাশে যেমন সাহসিকতার দাবি রাখে, তেমনি মাটিতেও বীরত্বের আরেকটি অধ্যায় রচনা করে।