শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৫, ০৬:৩২ পিএম

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার সহজ উপায়

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৫, ০৬:৩২ পিএম

প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিচ্ছেন দুই শিক্ষক। ছবি- সংগৃহীত

প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিচ্ছেন দুই শিক্ষক। ছবি- সংগৃহীত

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শুধু একটি চাকরি নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলার মহৎ দায়িত্ব। যারা শিক্ষা পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান এবং সমাজে অবদান রাখতে আগ্রহী, তাদের জন্য প্রাথমিকের শিক্ষকতার পেশা হতে পারে সেরা একটি পছন্দ। তাইতো যদি শিক্ষক হতে চান তবে এখনই জেনে নিন প্রাথমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সহজ কিছু উপায়।

আজকের এই লেখায় আমরা আলোচনা করবো আবেদনের যোগ্যতা, বেতন ও সুযোগ-সুবিধা, এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা।

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) অধীনে প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। এটি একটি সরকারি চাকরি। সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৩। বেতন স্কেল ১১ হাজার থেকে ২৬ হাজার ৫৯০ টাকা।

ডিপিই মূলত সহকারী শিক্ষক পদে ‍নিয়োগের জন্য পরিচালিত হয়ে থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি প্রধান শিক্ষকের নিয়োগের ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ছিলো ১১। তবে সম্প্রতি সেটি দশম গ্রেডে নিয়ে এসেছে সরকার।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কাজ শুধু পাঠ্যপুস্তক শেখানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং তারা শিশুদের মধ্যে সৃজনশীলতা, নৈতিকতা, এবং সামাজিক দক্ষতা গড়ে তোলার জন্য কাজ করেন।

আবেদন যোগ্যতা

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পদের জন্য আবেদন করতে কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা থাকতে হবে।

১. কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রী অর্জন করতে হবে। ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএ (৪.০০ স্কেলে কমপক্ষে ২.২৫ এবং ৫.০০ স্কেলে কমপক্ষে ২.৮) প্রয়োজন।

২. সাধারণ প্রার্থীদের জন্য বয়সসীমা ২১ থেকে ৩২ বছর। মুক্তিযোদ্ধা কোটার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর। তবে বর্তমানে প্রাথমিকে কোটা পদ্ধতি সীমিত করা হয়েছে। 

আবেদন প্রক্রিয়া

বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদের জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া খুব সহজ এবং সম্পূর্ণ অনলাইন-ভিত্তিক। নিচে ধাপে ধাপে এই প্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো-

১. প্রথমে আবেদনকারীকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে (dpe.teletalk.com.bd) প্রবেশ করতে হবে। সেখানে আবেদন ফর্ম পূরণের বিস্তারিত নির্দেশনা পাওয়া যাবে। সে অনুযায়ী- অনলাইনে ফর্ম পূরণ করতে হবে এবং তা সাবমিট করলে ইউসার আইডিসহ একটি ড্রাফট অ্যাপলিকেন্ট কপি তৈরি হবে। এই কপিটি প্রিন্ট করে নিজের দেওয়া তথ্য যাচাই করতে হবে।

২. আবেদন জমা দেওয়ার আগে প্রার্থীদের দেওয়া তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করতে হবে। যদি কোনো ভুল তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে নতুন করে সঠিক তথ্য দিয়ে ফর্ম পূরণ করতে হবে। ভুল তথ্য দিয়ে আবেদন ফি জমা দিলে তা আর ফেরত পাওয়া যাবে না।

৩. তথ্য যাচাই করার পর নির্ধারিত আবেদন ফি জমা দিতে হবে। এর জন্য আপনাকে টেলিটক প্রি-পেইড মোবাইল নম্বর ব্যবহার করতে হবে। ফি বাবদ ২০০ টাকা এবং সার্ভিস চার্জ ২০ টাকা সহ মোট ২২০ টাকা জমা দিতে হবে। ফি জমা দেওয়ার পর প্রার্থীর মোবাইল নম্বরে ইউসার আইডি এবং পাসওয়ার্ডসহ একটি এসএমএস আসবে।

৪. ফি জমা দেওয়ার পর dpe.teletalk.com.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে Download Applicant's Copy ট্যাবে ক্লিক করতে হবে। মোবাইল নম্বরে প্রাপ্ত User ID এবং Password ব্যবহার করে Paid Status সম্পন্ন Final Applicant's Copy ডাউনলোড করা যাবে। এই কপিটি রঙিন প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করতে হবে।

৫. আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর, প্রার্থীদের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা চূড়ান্ত হলে প্রার্থীদের মোবাইল নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে প্রবেশপত্র ডাউনলোডের লিংক পাঠানো হবে। এই প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে পরীক্ষার দিন সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।

৬. আবেদন করার সময় মোবাইল নম্বরটি সচল রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পরীক্ষার সব ধরনের তথ্য মোবাইল নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে।
প্রার্থীদের নিজ উপজেলা/থানার স্থায়ী ঠিকানার ভিত্তিতে তাদের প্রার্থীতা নির্ধারিত হবে। আবেদন ফি জমা দেওয়ার পর আর কোনো তথ্য পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে না।

নিয়োগ পরীক্ষা

প্রাইমারি শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষাটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়।

১. লিখিত পরীক্ষা- বাংলা, গণিত, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান, বিজ্ঞান, আইসিটি (ICT) বিষয়ক প্রশ্ন থাকে।  
এটি MCQ ফরম্যাটে হয়ে থাকে।

২. মৌখিক পরীক্ষা- লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। এখানে প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, যোগাযোগ দক্ষতা এবং শিক্ষাদান সম্পর্কে ধারণা যাচাই করা হয়।

৩. ফাইনাল নির্বাচন- লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়।

নিয়োগ প্রক্রিয়া  

১. মেধা তালিকা- চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের মেধার ভিত্তিতে তালিকা তৈরি করা হয়।

২. পোস্টিং- নতুন শিক্ষকরা নির্ধারিত স্কুলে যোগদান করেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে নিজের গ্রামে পোস্টিং পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়।

৩. প্রশিক্ষণ- যোগদানের পর শিক্ষকদের বিএড অথবা সমমানের প্রশিক্ষণ নিতে হয়।

বেতন ও সুযোগ-সুবিধা

সরকারি প্রাইমারি শিক্ষকদের বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সময়ের সাথে উন্নত হয়েছে। সহকারী শিক্ষকদের মূল বেতন শুরু হয় ১১ হাজার টাকা থেকে।  
প্রধান শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি।

মহিলা প্রার্থীদের জন্য নিজ গ্রামের স্কুলে পোস্টিং পাওয়ার সুযোগ বেশি। পুরুষ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এই সুযোগ কিছুটা সীমিত। সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক হওয়া সম্ভব। এ ছাড়া নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষকদের অ্যাসিসটেন্ট থানা এডুকেশন অফিসার (এটিও) পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ থাকে।

সরকারের নির্ধারিত নিয়মে প্রতি বছর বেতন বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি শিক্ষকদের মহার্ঘ ভাতা, উৎসব ভাতা, এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে।  

এ ছাড়া শিক্ষকদের জন্য রয়েছে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধাও। যেমন- সরকারি শিক্ষকদের গৃহ নির্মাণ ঋণ সুবিধা দেয়া হয় (৩৫ লাখ থেকে ২ কোটি)। রয়েছে স্বাস্থ্যবিমা এবং পেনশন সুবিধা। এমনকি শিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত বসবাসের জায়গাও।

প্রাইমারি শিক্ষকতার ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল।

১. নিরাপদ চাকরি- এটি একটি স্থায়ী এবং সরকারি চাকরি হওয়ায় নিরাপত্তা বেশি।

২. সমাজে সম্মান- শিক্ষকরা সমাজে অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত।

৩. ব্যক্তিগত উন্নয়ন- চাকরির পাশাপাশি শিক্ষকরা উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

৪. অবসরকালীন সুবিধা- পেনশন সুবিধা এবং অন্যান্য আর্থিক সহায়তা। অবসর গ্রহণের পরেও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ থাকে।

প্রাইমারি শিক্ষক হওয়া মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পথপ্রদর্শক হওয়া। যারা এই পেশায় আসতে চান, তাদের অবশ্যই নিয়োগ প্রক্রিয়া, যোগ্যতা এবং সুযোগ-সুবিধাগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরুরি। এটি শুধু একটি চাকরি নয় বরং দেশ ও সমাজের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার সুযোগ। সঠিক পরিকল্পনা ও মনোযোগ দিয়ে প্রস্তুতি নিন এবং একটি সফল ক্যারিয়ার গড়ে তুলুন।

Shera Lather
Link copied!