বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৫, ০৫:৩৬ এএম

বিলুপ্তির পথে বাংলাদেশের মৃৎশিল্প

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৫, ০৫:৩৬ এএম

পাবনার একজন মৃৎশিল্পী। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

পাবনার একজন মৃৎশিল্পী। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

‘মৃৎ’ শব্দটি মৃত্তিকা বা মাটি বোঝায়, আর ‘শিল্প’ বলতে বোঝানো হয় সৃষ্টিশীল সৌন্দর্যপূর্ণ বস্তু। সে অনুযায়ী, মাটি দিয়ে তৈরি যেকোনো শিল্পকর্মই মৃৎশিল্প নামে পরিচিত। ইংরেজিতে একে বলা হয় Pottery বা Ceramic Art। যারা এ শিল্পে নিযুক্ত, তারা ‘কুমার’ বা ‘কুম্ভকার’ নামে পরিচিত এবং যেসব কর্মশালায় তারা কাজ করেন, সেগুলো ‘কুমারশালা’ বা ‘কুম্ভশালা’ নামে পরিচিত।

বাংলাদেশে মৃৎশিল্প একটি প্রাচীন ও গৌরবময় ঐতিহ্যের অংশ। এই শিল্প হাজার বছরের পুরনো এবং বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মহাস্থানগড়, ময়নামতি ও পাহাড়পুরের প্রত্নতাত্ত্বিক খননে পাওয়া গেছে বহু মাটির তৈজসপত্র ও শিল্পকর্ম, যা প্রমাণ করে যে প্রাচীন বাংলার মানুষ মৃৎশিল্পে পারদর্শী ছিল।

প্রাচীন বাংলার পুণ্ড্র, বগুড়া এবং রংপুর অঞ্চলে রান্নার পাত্র, খাবার সংরক্ষণের পাত্র ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত মাটির মূর্তির প্রচলন ছিল। মাটি পুড়িয়ে তৈরি টেরাকোটা বিশেষভাবে ব্যবহৃত হতো হিন্দু-বৌদ্ধ স্থাপত্য ও মন্দিরে।

মধ্যযুগে, বিশেষ করে সুলতানি ও মুঘল আমলে, মৃৎশিল্প আরও উন্নত হয়। কান্তজীর মন্দির, ষাট গম্বুজ মসজিদে ব্যবহৃত টেরাকোটার কারুকাজ এই সময়ের উৎকৃষ্ট নিদর্শন।

বিশ্বদৃষ্টিকোণ থেকে মৃৎশিল্পের উৎপত্তি চীনের থাংশান শহরে, যেখানে মিং রাজবংশের আমলে এই শিল্প বিকশিত হয়। থাংশান শহরটি পেইচিং থেকে ১৫০ কিমি দূরে অবস্থিত এবং এখানকার চীনামাটির শিল্প প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো। আজও থাংশান বিশ্ববিখ্যাত সিরামিক শিল্পের জন্য।

ব্রিটিশ আমলে পশ্চিমা ধাতব সামগ্রীর আগমনে মৃৎশিল্পের কদর কিছুটা কমে যায়। তবে গ্রামীণ জীবনে মাটির পাত্র ও প্রতিমার ব্যবহার তখনো বহুল প্রচলিত ছিল। স্বাধীনতার পর প্লাস্টিক, মেলামাইন ও স্টিলের জিনিসের আধিপত্যে মৃৎশিল্পের ব্যবহার ক্রমে কমে যেতে থাকে। যদিও শহরাঞ্চলে মেলার মাধ্যমে কিছুটা চাহিদা এখনো রয়েছে।

এই শিল্পের প্রধান উপকরণ হলো- এঁটেল মাটি, জ্বালানি কাঠ, শুকনা ঘাস, খড়, বালি।

এই উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি হয়- কলসি, ফুলদানি, হাঁড়ি, টব, ডাইনিং আইটেম, ব্যাংক, শিশুদের খেলনা, ধর্মীয় প্রতিমা ইত্যাদি।

বর্তমানে বাংলাদেশের মৃৎশিল্প বিলুপ্তির পথে। প্লাস্টিক ও ধাতব পণ্যের চাপে কুমারপাড়াগুলোর কর্মব্যস্ততা কমে এসেছে। অনেক পরিবার পেশা পরিবর্তন করেছে, কারণ এই শিল্পে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। শহরে কিছু লোক এ পণ্যগুলো ঘর সাজানোর কাজে ব্যবহার করলেও, তা শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য যথেষ্ট নয়।

মৃৎশিল্প এক সময় গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাত ছিল। কুমার সম্প্রদায় এই শিল্পে জীবন নির্বাহ করতেন। ধর্মীয় রীতিনীতিতে মাটির প্রদীপ, প্রতিমা ও পাত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার ছিল। কিন্তু আধুনিকতার ফলে এই পেশায় থাকা মানুষেরা আজ অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন।

তবে এখনো মৃৎশিল্পের পুনর্জাগরণের সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য প্রয়োজন- সরকারি উদ্যোগ ও সহায়তা, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতা, সহজ শর্তে ঋণ ও প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও ডিজাইনের উন্নয়ন, শিল্পকে ব্র্যান্ড হিসেবে তুলে ধরা।

Shera Lather
Link copied!