ঢাকা শুক্রবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৫

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা আজ, ট্রাম্পের মুখে ফুটবে হাসি?

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৯, ২০২৫, ০৭:৫১ এএম
নোবেল পুরস্কার। ছবি- সংগৃহীত

এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে আজ শুক্রবার (১০ অক্টোবর)। নরওয়ের অসলোতে স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা) এই ঘোষণা দেওয়া হবে। বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক আগ্রহ বিরাজ করছে। আর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রহের একটি বড় কারণ হলো- তার পূর্বসূরিদের মধ্যে চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এরই মধ্যে শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। তারা হলেন- থিওডোর রুজভেল্ট (১৯০৬), উড্রো উইলসন (১৯১৯), জিমি কার্টার (২০০২) এবং বারাক ওবামা (২০০৯)। কার্টার ছাড়া সবাই দায়িত্বে থাকার সময় এই পুরস্কার পান। বিশেষভাবে ওবামা ক্ষমতা নেওয়ার মাত্র আট মাসের মধ্যে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ট্রাম্পের দলীয় প্রচারণাও তাই ছিল পুরোদমে।

গাজা যুদ্ধবিরতি

পুরস্কার ঘোষণার মাত্র দুই দিন আগে, বুধবার, ট্রাম্প গাজা যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি বিনিময় চুক্তির ঘোষণা দেন। অনেকেই একে শান্তি প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে দেখলেও, তা এই বছরের বিবেচনায় প্রভাব ফেলতে পারেনি। কারণ, নরওয়েজিয়ান সংবাদমাধ্যম ভিজি জানিয়েছে, নোবেল কমিটি সোমবারই বিজয়ী নির্ধারণ করে ফেলেছে, যা এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আগেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এমনকি যদি তারা চুক্তির বিষয়ে আগে থেকেই জানতেন, তবু কমিটি তাদের স্বাভাবিক দীর্ঘমেয়াদি বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করে কোনো তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিত না।

বিশ্লেষকরা কী বলছে?

অভিজ্ঞ নোবেল-পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, ট্রাম্পের জয় ‘অত্যন্ত অসম্ভব’। তাদের মতে, তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা ভাঙার নানা প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, যা নোবেলের আদর্শের পরিপন্থি।

শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট অসলোর (PRIO) প্রধান নিনা গ্রেগার বলেন, ‘আলফ্রেড নোবেলের উইলের মূল তিনটি ভিত্তি- শান্তি প্রতিষ্ঠা, নিরস্ত্রীকরণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। ট্রাম্প বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছেন, যা এসব নীতির বিপরীত।’

নোবেল ইতিহাসবিদ অ্যাসলে স্ভিন বলেন, ‘স্বৈরশাসকদের প্রতি ট্রাম্পের প্রশংসা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তার বিরুদ্ধেই যায়।’

কে হতে পারে বিজয়ী?

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এবারের পুরস্কার শান্তি ও মানবিক সহায়তার সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলোর হাতে যেতে পারে। সম্ভাব্য প্রাপকদের মধ্যে রয়েছে-

সুদানের স্বেচ্ছাসেবী নেটওয়ার্ক ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুম’

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNHCR)

ইউনিসেফ

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ)

রেড ক্রস

ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স

এছাড়া সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রেক্ষিতে, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স এবং কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস-এর মতো সংস্থাগুলোর দিকেও নজর থাকতে পারে। বিশেষ করে গাজা অঞ্চলে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রাণহানির ঘটনাগুলো কমিটির নজরে আসতে পারে।

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার কীভাবে দেওয়া হয়?

নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল ৩১ জানুয়ারি। এ বছর ৩৩৯ জন প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন- এর মধ্যে ২৪৪ জন ব্যক্তি এবং ৯৫টি সংস্থা।

নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির পাঁচ সদস্য রয়েছেন, যারা এই সিদ্ধান্ত নেন। তারা হলেন-

জোয়ার্গেন ওয়াটনে ফ্রাইডনেস

অ্যাসলে তোজে

অ্যান এঙ্গার

ক্রিস্টিন ক্লেমেট

গ্রি লারসেন

কমিটির সচিব হিসেবে কাজ করেন ক্রিস্টিয়ান বার্গ হার্পভিকেন। তিনি আলোচনায় অংশ নেন, তবে ভোট দিতে পারেন না।

মনোনয়ন কীভাবে কাজ করে?

নোবেল পুরস্কার মনোনয়ন গোপন থাকে ৫০ বছর পর্যন্ত। তবে, মনোনয়নদাতারা চাইলে তাদের মনোনীত ব্যক্তির নাম প্রকাশ করতে পারেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মনোনীত করেন রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য ক্লডিয়া টেনি। তিনি ৩১ জানুয়ারির এক দিন আগে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এছাড়াও কম্বোডিয়া, ইসরায়েল ও পাকিস্তানের নেতারাও তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

তবে নিজেকে কেউ মনোনয়ন দিতে পারেন না, এবং সাধারণ কেউ এই মনোনয়ন দিতে পারেন না। কেবলমাত্র জাতীয় সংসদ সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিচারক ও পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই মনোনয়ন দেওয়ার অধিকার রাখেন।

গত বছরের বিজয়ী কারা?

গত বছরের (২০২৪) শান্তি পুরস্কার পেয়েছিল নিহন হিডানকিও নামে একটি সংগঠন, যা ১৯৪৫ সালে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দ্বারা গঠিত। তাদের পুরস্কৃত করা হয় পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টার জন্য এবং সেসব হামলার সাক্ষ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে।

পুরস্কার ও অনুষ্ঠান সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন

নোবেল শান্তি পুরস্কারের বিজয়ী পান একটি স্বর্ণপদক, একটি আনুষ্ঠানিক সনদ এবং ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৮ কোটি টাকা)। অন্যান্য বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয় সুইডেনের স্টকহোমে, তবে শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয় নরওয়ের অসলোতে- আলফ্রেড নোবেলের উইলে নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী।

পুরস্কার ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হবে ১০ ডিসেম্বর, আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে।