প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের দেশে নানা ধরনের ভেষজ উপাদান ব্যবহার করে শরীরের সুস্থতা রক্ষা করা হয়ে আসছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো চিরতা। তীব্র তিক্ত স্বাদের এই ভেষজ উদ্ভিদ আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে খালি পেটে সকালে চিরতার পানি পান করলে শরীরের ভেতরকার নানা সমস্যা দূর হয়। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
চলুন জেনে নিই খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা—
১. লিভার পরিষ্কার করে
চিরতা লিভার ডিটক্স করতে সাহায্য করে। খালি পেটে সকালে চিরতার পানি পান করলে লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং পিত্ত নিঃসরণ ঠিকভাবে হয়, ফলে হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়।
২. রক্ত বিশুদ্ধ করে
চিরতা একটি প্রাকৃতিক রক্ত বিশুদ্ধিকারক। এটি শরীরের টক্সিন বের করে দেয়, ফলে ত্বক ভালো থাকে এবং ব্রণ বা চর্মরোগের ঝুঁকি কমে। যারা বারবার ব্রণ বা ফুসকুড়ির সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য চিরতার পানি খুবই উপকারী।
৩. হজমশক্তি বাড়ায়
খালি পেটে চিরতার পানি পেটে গিয়ে পাচনতন্ত্রের এনজাইমগুলো সক্রিয় করে। এতে গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে যায়।
৪. জ্বর ও সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর
চিরতার অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ভাইরাল গুণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ঋতু পরিবর্তনের সময় বা ভাইরাল জ্বরের প্রবণতা কমাতে চিরতা উপকারী।
৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
চিরতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। নিয়মিত খালি পেটে চিরতার পানি পান করলে ডায়াবেটিস রোগীদের উপকার পাওয়া যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে গ্রহণ করা ভালো।
৬. ক্ষুধা বাড়ায়
অনেকের খাওয়ার রুচি কমে গেলে বা দীর্ঘদিন অসুস্থতার পর দুর্বল লাগলে খালি পেটে চিরতার পানি পান করলে রুচি বাড়ে।
৭. জন্ডিস বা পিত্তের সমস্যায় সহায়ক
লিভার সংক্রান্ত সমস্যা, বিশেষ করে জন্ডিস বা অতিরিক্ত পিত্তের কারণে শরীরের হলুদভাব দূর করতে চিরতা কার্যকর।
কীভাবে খাবেন
রাতে ৪-৫ টুকরো চিরতা ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
সকালে খালি পেটে সেই পানি ছেঁকে পান করুন।
প্রথমদিকে একদিন পরপর খেলে ভালো, পরে নিয়মিত খাওয়া যায়।
সতর্কতা
অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে অতিরিক্ত তিক্ততার কারণে পেটের সমস্যা বা রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
গর্ভবতী মহিলা, শিশু বা যারা উচ্চ রক্তচাপজনিত ওষুধ খান, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া না খাওয়াই ভালো।