দারুচিনি আমাদের দেশের অত্যন্ত পরিচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি মসলা। শুধু রান্নার স্বাদ-গন্ধ বাড়াতেই নয়, দারুচিনি ওষুধ হিসেবেও বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদান। তবে নিয়ম না মেনে বা অতিরিক্ত খেলে দারুচিনির কিছু অপকারিতাও হতে পারে।
দারুচিনির উপকারিতা
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে দারুচিনি খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
দারুচিনিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
দারুচিনি খাওয়ার ফলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ে, যা হার্টের জন্য উপকারী।
হজমশক্তি বাড়ায়
দারুচিনি হজমে সাহায্য করে এবং গ্যাস, পেট ফাঁপা বা বদহজমের সমস্যা কমায়।
প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে
শরীরের অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক প্রদাহ কমাতে দারুচিনি কার্যকর। আর্থরাইটিস বা হাঁটুর ব্যথায় এটি উপকারী হতে পারে।
সর্দি-কাশি কমায়
ঠান্ডা-কাশি বা গলা ব্যথার সময় দারুচিনির চা বা দারুচিনি মধু মিশিয়ে খেলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়।
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়
গবেষণায় দেখা গেছে, দারুচিনি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
দারুচিনির অপকারিতা
অতিরিক্ত খেলে যকৃৎ ক্ষতির ঝুঁকি
দারুচিনিতে Coumarin নামে একটি যৌগ থাকে, যা অতিরিক্ত গ্রহণ করলে যকৃৎ (লিভার) এর ক্ষতি করতে পারে।
মুখ বা গলায় জ্বালা-পোড়া
কাঁচা বা অতিরিক্ত দারুচিনি খেলে মুখ বা গলায় জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি হতে পারে।
রক্তপাতের ঝুঁকি
দারুচিনি রক্ত তরল রাখতে সাহায্য করে, কিন্তু অতিরিক্ত খেলে এটি রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষ করে যারা আগে থেকেই ব্লিডিং ডিজঅর্ডার বা অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতিতে আছেন।
গর্ভবতী নারীদের জন্য সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত দারুচিনি খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা উচিত নয়।
এলার্জির ঝুঁকি
কিছু মানুষের ক্ষেত্রে দারুচিনি অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে, যেমন ত্বকে লালচে ভাব বা চুলকানি।
কীভাবে নিরাপদে গ্রহণ করবেন?
- প্রতিদিন ১/২ থেকে ১ চা-চামচের বেশি দারুচিনি খাওয়া উচিত নয়।
- দারুচিনি গুঁড়ো না খেয়ে চায়ে বা রান্নায় সামান্য ব্যবহার করা নিরাপদ।
- দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করার আগে বিশেষ করে ডায়াবেটিস, হার্ট বা লিভারের রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- বাজার থেকে ভালো মানের খাঁটি দারুচিনি কিনুন, কারণ নকল বা নিম্নমানের দারুচিনিতে ক্ষতিকর উপাদান থাকতে পারে।
দারুচিনি আমাদের নিত্যদিনের রান্নার অপরিহার্য উপাদান হলেও এর রয়েছে অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, রোগ প্রতিরোধ, হজম, হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করতে কার্যকর। তবে অতিরিক্ত বা ভুলভাবে ব্যবহার করলে যকৃৎ ক্ষতি, রক্তপাত বা এলার্জির মতো সমস্যাও হতে পারে। তাই পরিমিত এবং সঠিক নিয়মে দারুচিনি খেলে এর প্রকৃত উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।