বর্তমানে মৌসুম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, করোনা ও অন্যান্য ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। জ্বরে আক্রান্ত হলে কিংবা জ্বর থেকে সেরে ওঠার সময় অধিকাংশ মানুষেরই মুখে অরুচি দেখা দেয়, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি। জিভে তিতা ভাব, গন্ধহীনতা বা খাবারে আগ্রহ হারানো এসব সাধারণ উপসর্গ হলেও রোগমুক্তির জন্য সঠিক পুষ্টি গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বরের সময় ও পরবর্তী পর্যায়ে শরীর দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে বাড়তি ক্যালরির প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেকেই খাবার খেতে না চাওয়ার কারণে দুর্বল হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় কীভাবে মুখের রুচি ফিরিয়ে স্বাস্থ্য ঠিক রাখা যায়, আসুন জেনে নিই কিছু কার্যকর উপায়।
একবারে বেশি না খেয়ে অল্প করে বারবার খান। খাবারকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ২-৩ ঘণ্টা পর পর খাওয়া উপকারী।
পানির সময় মেনে চলুন: খাবারের আগে বা মাঝখানে পানি না খেয়ে, খাওয়ার কিছুক্ষণ পর পানি পান করুন।
মুখের রুচি বাড়ানোর কার্যকর খাবার
চিকেন স্যুপ, টমেটো স্যুপ, লেমন করিয়্যান্ডার স্যুপ ইত্যাদি শুধু মুখের রুচি নয়, শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। চিকেন স্যুপে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল: লেবু, কমলা, মাল্টা, আনারস, আমলকী, টমেটো, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি প্রতিদিনের ডায়েটে রাখুন। এগুলো মুখের রুচি ফিরিয়ে আনে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
লেবু ও টমেটোর চাটনি খাওয়ার সঙ্গে রাখলে খাবারে বৈচিত্র্য আসে, পুদিনা পাতা মুখে রাখলে তিতা ভাব অনেকাংশে কেটে যায়।
প্রাকৃতিক উপাদান ও ঘরোয়া সমাধান
আদা ও রসুনের ব্যবহার: খাওয়ার আগে এক টুকরো আদা চিবিয়ে খাওয়া বা খাবারে রসুন যোগ করলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল উপকার পাওয়া যায়।
মধু ও গরম লবণ পানি: কাশি বা গলার অসুবিধায় মধু ভালো কাজ করে। পাশাপাশি দিনে ২-৩ বার লবণ মিশানো হালকা গরম পানিতে কুলকুচি করলে মুখের তাজাতা ফিরে আসে।
তরল ও পুষ্টিকর পানীয়
কচি ডাবের পানি: প্রাকৃতিক গ্লুকোজ ও ইলেকট্রোলাইটে ভরপুর যা শরীরকে দ্রুত রিকভার করে।
স্মুদি, মিল্কশেক, দই ও আইসক্রিম: দুধ খেতে না চাইলে এগুলো বিকল্প হতে পারে। এসব পানীয় মুখের রুচি বাড়াতে সহায়তা করে।
জিংকযুক্ত খাবার যেমন ডিম, দুধ, পনির, বাদাম, মাশরুম, পালংশাক ইত্যাদি মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে কার্যকর।
ভিটামিন বি-১ ও মাছের তেল সাপ্লিমেন্ট ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে এগুলো গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
তেলেভাজা, অতিরিক্ত ঝাল ও মসলাযুক্ত খাবার জ্বরের সময় পরিহার করুন। পচনশীল বা বাসি খাবার থেকে দূরে থাকুন।
জ্বর বা ভাইরাসজনিত অসুস্থতা থেকে সেরে ওঠার পরপরই মুখের রুচি হারানো স্বাভাবিক, তবে সেটিকে অবহেলা করলে দীর্ঘমেয়াদি দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। তাই সঠিক খাবার বেছে নিয়ে ধীরে ধীরে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। রুচি না থাকলেও শরীরের ক্যালরি ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা জরুরি।
আপনার মতামত লিখুন :