বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শামসুন্নাহার সুমনা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৪, ০২:৩৪ পিএম

হেমন্তের রূপ বৈচিত্র্য

শামসুন্নাহার সুমনা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৪, ০২:৩৪ পিএম

ছবি: মো. ইসহাক ফারুকী

ছবি: মো. ইসহাক ফারুকী

ষড়ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। এদেশের ছয়টি ঋতুই তার নিজস্বতায় একেক রকম সৌন্দর্য বহন করে। হেমন্ত সেসবের মধ্যে একটি অন্যতম ঋতু। হেমন্তকালে প্রকৃতির রূপ হয় সোনা বর্ণের। গ্রাম-বাংলার যেদিকে দুচোখ যায় সবখানেই দেখা যায় শুধু সোনা রঙের ছড়াছড়ি। এই ঋতুতে হালকা হালকা শীতের আগমন ঘটে, খুব সকালে দূর্বালতার পা ভিজিয়ে দেওয়ার দৃশ্যই বলে দেয় শীত আসতে খুব বেশি দেরি নেই। তাইতো হেমন্ত কালকে শীতের আগমনী বার্তা বলা হয়। কার্তিক-অগ্রহায়ণ, এই দুই মাস মিলে হেমন্তের সময়কাল। হেমন্তের দিনের আকাশ হালকা নীল বর্ণের থাকে, বিকেলের আকাশে মাঝে মাঝে দেখা যায় সাতটি রঙের রংধনু। আর রাতের আকাশে দেখা মেলে পূর্ণ চাঁদের আলোর। চাঁদের রুপালি আলোতে রাতের প্রকৃতিকে দেখতে ভীষণ মায়াবী লাগে হেমন্তকালে।

হেমন্তের শুরুতে প্রকৃতি গাঢ় সবুজ থাকে। ধীরে ধীরে তা সোনালি বর্ণ ধারণ করে। দেখলে মনেহয় যেন কেউ সোনা ছড়িয়ে রেখেছে বিস্তৃত পাথারজুড়ে। সকাল বেলা হালকা শিশির কণা ভিজিয়ে দেয় ধানের গাছগুলোকে। খানিক বাদেই সূর্য মামা তার আলোক রশ্মি ছড়িয়ে দেয়। পাকা ধানের শীষের উপর জমে থাকা শিশির কণায় সূর্যের আলো পড়ে হীরার মতো চিকচিক করে জ্বলতে থাকে। অতঃপর রোদ বাড়তে বাড়তেই হারিয়ে যায় শিশির বিন্দুগুলো। তখন রোদের আলোয় পাকা ধানগুলো খিলখিল করে হাসতে থাকে। তা দেখে কৃষকের মুখে ফুটে ওঠে সুখের হাসি। এরপর শুরু হয় ধান কাটার পালা। গোটা পাথার জুড়ে দেখা মেলে শুধু কৃষকদের ধান কাটার দৃশ্য। দিনভর কৃষকরা ব্যস্ত থাকেন ধান কাটার কাজে। কাটা শেষে কেউবা কাঁধে করে, কেউ বা গরুর গাড়িতে করে বাড়ির উঠোনে নিয়ে আসেন তাদের হাজারো স্বপ্নের সোনালি ধান। শুরু হয় ধান মাড়াই কাজ। কৃষাণীরাও অংশ নেয় এই ধান মাড়াই কাজে। মাড়াই শেষে কৃষাণ বধুরা রাত জেগে ধান সিদ্ধ করে। সকালের রোদ ফুটে উঠতে উঠতেই শুরু হয়ে যায় কৃষাণীদের ধান শুকানোর তাড়া, কার আগে কে ধান শুকাতে পারে। যেন ধান শুকানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয় কৃষাণীদের মাঝে। হেমন্তের প্রধান সৌন্দর্য মূলত এসবের মাঝেই, যা শুধুমাত্র গ্রাম বাংলার মানুষরা ছাড়া অন্য কেউ উপভোগ করতে পারে না।

হেমন্তকালে রৌদ্রের প্রখরতা খুব বেশি থাকে না, বিধায় ধানের কাজে খুব বেশি কষ্ট পেতে হয় না কৃষাণ-কৃষাণীদের। ধান শুকানো আর ধান ভানা শেষে সারা গায়ে নবান্নের ধুম পড়ে যায়। পিঠা পায়েস খাওয়ার উৎসবে মেতে ওঠে গ্রাম বাংলার ছোট-বড় সবাই। নতুন ধানের চাল-গুঁড়া দিয়ে নানা রকম পিঠা, পায়েস ও বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কৃষাণীরা। আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো হয় সেই পিঠা পায়েস। সারা গায়ে একটা খুশির আমেজ বিরাজ করে তখন। কৃষক বাবারও থেমে থাকে না আর। ধান কাটার পর ফাঁকা জমিকে আবারও চাষ উপযোগী করার জন্য লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করেন। তারপর উর্বর জমিতে বপন করে বিভিন্ন শীতকালীন শাক-সবজির বীজ। যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বরবটি, শিম, মুলা, পালংশাক, সরিষাশাক, লালশাক ইত্যাদি। রোপণ করা হয় মরিচ, বেগুন, টমেটোর চারা। তারপর সারা দিনজুড়ে কৃষকরা ব্যস্ত থাকেন চারা পরিচর্যার কাজে। সকালের শিশির, আর মিষ্টি রোদের ছোঁয়ায় ধীরে ধীরে সতেজ হয়ে উঠতে থাকে শাক আর সবজির চারাগুলো। ততোদিনে শীত কাছাকাছি চলে আসে। প্রকৃতি ধীরে ধীরে ধূসর বর্ণ ধারণ করতে থাকে।

হেমন্ত ঋতুর আরেকটি বিশেষ সৌন্দর্য হচ্ছে সরিষা ফুলের সৌন্দর্য। হেমন্তের মাঝামাঝি সময়ে সরিষা চাষ করা হয়। হেমন্তের শেষের দিকে সরিষার ফুল ফুটে প্রকৃতি আরও একবার কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি পরে সুশোভিত হয়। সরিষা ফুলের ম ম গন্ধে ভরে যায় গ্রাম বাংলার মাঠ, ঘাট, পাথার সব জায়গা। মৌমাছিরা গুনগুন গান গেয়ে খুশিমনে মধু আহরণ করতে থাকে সরিষা ফুল থেকে। হেমন্ত কালে আরও কিছু ফুল ফুটতে দেখা যায়। যেমন জুঁই, চামেলি, শিউলি, শেফালী, কামিনী, ছাতিম ইত্যাদি। হেমন্তকালে ফুলের সমাহার যেমন কম, তেমনি ফলও কম হয়। নারিকেল এ ঋতুর প্রধান ফল। এছাড়াও চালতে, আমলকি, ডালিম কামরাঙা ইত্যাদি ফল এ ঋতুতে পাওয়া যায়।
হেমন্তে বর্ষাকালের বন্যার পানি কমে যাওয়ায় ফলে খাল-বিল, ডোবা ও নদীগুলোতে অনেক ধরনের মাছ ধরা পড়ে। যেমন- মাগুর, শিং, কৈ, শৈল, টাকি, বোয়াল ইত্যাদি। এসব মাছ বাজারে বিক্রি করে জেলেরা অধিক লাভবান হয় হেমন্তকালে।
প্রাকৃতিক রূপ বৈচিত্র্যে ভরপুর হেমন্ত ঋতু তার নানা ধরনের রূপের ছটা ছড়িয়ে দিয়ে, শীতের আগমনে আবারও হারিয়ে যায় ঘন কুয়াশার আড়ালে। এ ঋতু আমাদের একটি নির্মল আবহাওয়ার স্নিগ্ধ ও রূপময় প্রকৃতি উপহার দেয়। সেই সঙ্গে অনেক ধরনের খাদ্য শস্যও দান করে। তাই হেমন্ত ঋতু মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য অনেক বড় একটা নেয়ামত।

আরবি/ আরএফ

Shera Lather
Link copied!