একটি সুস্থ জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাদ্য। কিন্তু পৃথিবীজুড়ে পরিবেশগত সমস্যার কারণে খাদ্য নিরাপত্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তবে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থায় জৈব কৃষি বা অর্গানিক ফার্মিংকে এর একটি কার্যকরী সমাধান হিসেবে বিবেচনা করছেন কৃষিবিদরা। তাদের মতে, এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি রয়েছে বেশকিছু সুবিধা। বিস্তারিত জানাতে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন,
‘জৈব কৃষির অনেক সুবিধা রয়েছে, তবে সবচেয়ে বেশি যে সুবিধা তা হলো নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন। আমরা খাদ্য উৎপাদন করছি, কিন্তু সেটা আমাদের জন্য কতটুকু নিরাপদ, সেটা আমাদের ভেবে দেখার বিষয় আছে। জৈব কৃষির মাধ্যমে আমরা নিরাপদ খাদ্য তৈরি করতে পারি। কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব? আমরা যদি গুড অ্যাগ্রিকালচার প্র্যাকটিস করতে পারি, তাহলে কিন্তু নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন সম্ভব। যেমন, আমরা বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি কিংবা ফসল উৎপাদন করছি। এই ফসলে যদি আমরা সিন্থেটিক পেস্টিসাইড, ইনসেকটিসাইড, ফাঙ্গিসাইড, উইডিসাইড বা আগাছানাশক, রোগবালাই, কীটনাশক এগুলো ব্যবহার না করে অন্য উপায় অবলম্বন করি, যেমন- প্রাথমিকভাবে জমিটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখে ইয়েলোস্ট্যাটিক চাপ, আলোক ফাঁদ, ফেরোমন ফাঁদ ইত্যাদি ব্যবহার করি, তাহলে আমরা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করতে পারব। আবার জৈব কৃষির মাধ্যমে আমরা ফসল থেকে পোকামাকড়ের আক্রমণ কমাতে পারি। যেকোনো ফসলের জমিতে যদি আমরা ডালপালা পুঁতে রাখি বা কিছু কিছু জায়গায় ধনচে গাছ লাগাই, তাহলে ওই গাছে পাখি বসবে, পরবর্তীতে পাখিগুলো পোকামাকড় ধরে খাবে, তাহলে এটা সেফ ফুড প্রোডাকশনের একটি উপায় হয়ে দাঁড়াবে।
এ ছাড়া জৈব কৃষির মাধ্যমে আমরা মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারি। আমরা মাটিতে সিন্থেটিক ফার্টিলাইজার ব্যবহার করার ফলে মাটিতে থাকা মাইক্রোঅর্গানিজম আস্তে আস্তে মারা যাচ্ছে, উদ্ভিদের যে খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া আছে সেটা কিন্তু সঠিকভাবে করতে পারছে না। তাই সিন্থেটিক ফার্টিলাইজার কমিয়ে জমিতে জৈব সার, ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচোসার, ট্রাইকোডার্মা যে কম্পোস্ট আছে সেগুলো ব্যবহার করতে পারি। এ ছাড়া জমিতে সবুজসার ব্যবহার করতে পারি। জমিতে বেশি বেশি শিম জাতীয় সবজি চাষ করলে নিউক্লিয়ার রিসাইকেল বা শস্য আবর্তন করে জৈব কৃষির মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারি। আবার জৈব কৃষির মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করাও সম্ভব। অর্থাৎ অজৈব সারের কারণে উপকারী পোকামাকড় যেমন, লেডি বার্ড বিটেল, যা অন্য পোকা ধরে খায়, ব্যাঙ, কেঁচো এই ধরনের জীবের প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশে মৌমাছির সংখ্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে, কারণ আমরা প্রচুর পরিমাণে ইনসেকটিসাইড ব্যবহার করছি। মৌমাছি শুধু আমাদের মধুই দেয় না, পরাগায়নেও সাহায্য করে। পরাগায়নের মাধ্যমে বীজ উৎপাদন হয়, পরবর্তীতে সেগুলো থেকে আমরা চারা উৎপাদন করি। তাই বলা যায়, জৈব কৃষির ব্যবহার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করবে এবং সৃষ্টি করবে পরিবেশবান্ধব চাষের নতুন দিগন্ত।’
আপনার মতামত লিখুন :