বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সুজন মৃধা, কলাপাড়া

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৪, ০৪:০৪ পিএম

লাল কাঁকড়া ও অতিথি পাখির স্বর্গরাজ্য

সুজন মৃধা, কলাপাড়া

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৪, ০৪:০৪ পিএম

লাল কাঁকড়া ও অতিথি পাখির স্বর্গরাজ্য

ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় জেলেরা একে বলে হাইরের চর। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। পাশাপাশি জেলেদের মাছ শিকারের ছোট-বড় নৌকা এবং ট্রলার দেখতে চাইলে আসতে হবে এই চরে। যেখানে বালুকাবেলায় খেলা করে লাল কাঁকড়া আর আকাশে উড়ে বেড়ায় অতিথি পাখির দল। দূর থেকে লাল কাঁকড়া দেখে মনে হবে লাল গালিচা বিছানো। সাধারণ মানুষের কাছে এর নাম চর বিজয়। সাগরকন্যা কুয়াকাটার অদূরে বঙ্গোপসাগরের বুকচিরে জেগে ওঠা এই চরে গেলে মন জুড়াবে নির্ঘাৎ। চর বিজয় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে পূর্ব দক্ষিণ কোনে ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। চরটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার। ২০১৭ সালে সরকারিভাবে স্থানীয় জেলা প্রশাসক চরটির সরকারি মালিকানা ঘোষণা করার পাশাপাশি চরটি রক্ষার ও উন্নয়নের কাজ করার নির্দেশনা দেয়। বছরের বর্ষা মৌসুমে চরটি পুরোপুরি পানির নিচে তলিয়ে যায় এবং শীত মৌসুমের আগমনে সমুদ্রের পানি কমতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চরটি দেখা মিলে। 
জেলে শহিদুল ইসলাম মাঝি বলেন, ‘আমরা যখন এই চরের কাছে মাছ ধরার জন্য নৌকা নিয়ে যাই তখন পাখি আর লাল কাঁকড়া দেখতে পাই। কাঁকড়া মূলত ছোট গুঁড়া মাছ খায়; তাই এরা চরের পানির কিনারেই বেশির ভাগ থাকে। এক একটি চক দেখে মনে হয় কয়েক লাখ কাঁকড়া থাকে।’ 
কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটক পাভেল আহমেদ বলেন, ‘চর বিজয় আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। চারদিকে পানি, মাঝখানে ছোট্ট দ্বীপটি অতুলনীয়। চর বিজয় ভালো লাগার বিষয় হলো, হাজার হাজার অতিথি পাখি ও ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়া। ফাইবার বোট ভাড়া করে চর বিজয়ে ঘুরে এসেছি।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, চর বিজয় আমাদের দেশের সম্পদ। এখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের সৌন্দর্যে আনন্দিত হবে যেকোনো পর্যটক। বিশাল আকৃতির এই চরের সঙ্গে স্থানীয় জেলেদের জীবন-জীবিকার একটি বড় অংশ মিশে আছে। কুয়াকাটার যতগুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে, তার মধ্যে চর বিজয় অন্যতম। একদিকে একজন পর্যটক সমুদ্র পথে নৌ-ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করতে পারবে। অন্যদিকে গভীর সমুদ্রে জেগে ওঠা চরের মনোরম দৃশ্য দেখতে পাবে। 
মহিপুর বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ বছর চর বিজয় বনায়নের জন্য ঝাউগাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে প্রাথমিক পর্যায়। গাছের চারাগুলো যদি বেঁচে থাকে, তাহলে আমাদের বনবিভাগের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে আরও গাাছ লাগানো হবে। পর্যটকদের কাছে অনুরোধ; তারা যেন লাল কাঁকড়া, অতিথি পাখিসহ এখানকার জীববৈচিত্র্যের কোনো ক্ষতি না করে। বনবিভাগের পাশাপাশি তারাও যেন জীববৈচিত্র্য রক্ষা সচেতন হয়।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, কুয়াকাটার অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান চর বিজয়। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ফাইভার বোট এবং স্পিড বোটের মাধ্যমে এখানে যেসব পর্যটকরা ভ্রমণে যায় এবং যেসব বোট মালিক ও চালক রয়েছে; তাদেরকে আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দিক নির্দেশনা দেওয়া আছে। প্রত্যেক পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্য অবশ্যই প্রতিটি বোটে ধারণ-ক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত যাত্রী না ওঠানো এবং লাইফ জ্যাকেট থাকতে হবে; দক্ষ চালক, প্রয়োজনীয় ইঞ্জিনচালিত তেল, মবিল, যন্ত্রপাতি বোটে রাখতে হবে; যেন চর বিজয় আসা যাওয়ার মাঝে পর্যটকদের কোনো ধরনের বিড়ম্বনা পোহাতে না হয়।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মো. রবিউল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের কথা চিন্তা করে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অস্থায়ী ২টি টয়লেট এবং একটি যাত্রী ছাউনি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা পর্যটকরা যখন চর বিজয়ের উদ্দেশ্যে ভ্রমণে যাবেন; তখন সঙ্গে করে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পানি, শুকনো খাবার সঙ্গে নিয়ে যাবেন। দূরত্ব বজায় রাখা এবং কোনো ধরনের সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার না করা ভালো হয়; যেটি প্রাকৃতিক সম্পদ লাল কাঁকড়ার ও অতিথি পাখির উপর প্রভাব পরে। চর বিজয়ের জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশ রক্ষায় পর্যটকসহ স্থানীয় যারা ওখানে ভ্রমণে যাবেন; তাদের ব্যবহৃত খাবারের ব্যাগ, চিপসের প্যাকেট বা খাবার পানির বোতল যেন ওখানে না ফেলে সেদিকে সবার খোয়াল রাখতে হবে। চর বিজয়ের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় অতিথি পাখি আর লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন ও বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি কাজ করে যাচ্ছে।

আরবি/ এম এইচ এম

Link copied!