ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫

চ্যাটজিপিটি ব্যবহারে এই প্রশ্নগুলো করলে আপনার অ্যাক্সেস স্থগিতও হতে পারে!

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৫, ১২:১৯ পিএম
চ্যাটজিপিটির ব্যবহার। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। লেখালেখি, পড়াশোনা, প্রজেক্ট তৈরিসহ নানা কাজে মানুষ এখন নির্ভর করছে AI টুলগুলোর ওপর। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি হলো চ্যাটজিপিটি (ChatGPT)।

তবে, অনেকেই জানেন না, এই টুলটি যেমন উপকারী, তেমনি কিছু সীমাবদ্ধতা এবং নীতিমালার ভেতরেও আবদ্ধ। আপনি যদি ভুল প্রশ্ন করেন, তাহলে আপনি বিভ্রান্ত হতে পারেন, সেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন এমনকি আপনার এক্সেস সাময়িকভাবে ব্লকও হয়ে যেতে পারে। চলুন জেনে নিই, চ্যাটজিপিটিকে ভুলেও কোন ধরনের প্রশ্ন করা উচিত নয়।

প্রথমত, আপনি কখনোই চ্যাটজিপিটির কাছে ব্যক্তিগত পাসওয়ার্ড বা গোপন তথ্য চাওয়া উচিত নয়। যেমন, ফেসবুক বা জিমেইলের পাসওয়ার্ড খোঁজা, অথবা কোনো ফোন নম্বর কার তা জানতে চাওয়া। চ্যাটজিপিটি নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার দিক থেকে এসব তথ্য দিতে পারে না এবং এসব চাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে আপনার নিজের জন্যও।

দ্বিতীয়ত, কোনো ধরনের অবৈধ কাজের উপায় বা কৌশল জানার চেষ্টা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। হ্যাকিং শেখা, ভুয়া ডকুমেন্ট বানানো বা অনৈতিক পন্থায় কিছু অর্জনের চেষ্টা করলে চ্যাটজিপিটি তাতে সাহায্য করে না। এরকম প্রশ্ন OpenAI-এর নীতিমালার পরিপন্থী এবং ভবিষ্যতে আপনার অ্যাক্সেসে প্রভাব ফেলতে পারে।

অনেকেই মজা করে বা রাগের বশে ঘৃণামূলক, আক্রমণাত্মক বা সহিংস প্রশ্ন করে থাকেন। যেমন, একটি নির্দিষ্ট ধর্ম, জাতি বা গোষ্ঠীকে আক্রমণ করে কিছু জিজ্ঞাসা করা, বা বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করা। এসব প্রশ্ন শুধু অনৈতিক নয়, সমাজে বিভেদ তৈরি করতেও পারে। তাই এই ধরনের প্রশ্ন একেবারেই বর্জন করা উচিত।

চ্যাটজিপিটিকে স্বাস্থ্যবিষয়ক বিপজ্জনক বা সংবেদনশীল প্রশ্ন করাও উচিত নয়। আপনি যদি জানতে চান "কোন বিষ খেলে মৃত্যু নিশ্চিত?", অথবা "ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই কীভাবে ওষুধ খাব?" তাহলে আপনি নিজের ঝুঁকিতেই থাকছেন। কারণ AI কখনোই চিকিৎসকের বিকল্প নয়, এবং ভুল তথ্য জীবনঘাতী হতে পারে।

অনেক সময় মানুষ চায় ভবিষ্যত সম্পর্কে নিশ্চিত উত্তর পেতে, যেমন “আমি কি চাকরি পাব?”, “আমি কবে মরব?” ইত্যাদি। অথচ AI কখনোই ভবিষ্যত বলতে পারে না এটি কেবল ডেটা ও পূর্বের তথ্য বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য ধারণা দিতে পারে। তাই এ ধরনের প্রশ্ন বাস্তবভিত্তিক নয়।

শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি সাধারণ প্রবণতা হলো, পরীক্ষার উত্তর বা অ্যাসাইনমেন্ট হুবহু কপি করে চাওয়া। এটি একদিকে শেখার ক্ষতি করে, অন্যদিকে একাডেমিক অনৈতিকতা তৈরি করে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন AI-ডিটেকশন টুল ব্যবহার করে থাকে, তাই আপনি ধরা পড়ে যেতে পারেন।

চ্যাটজিপিটি কখনোই কোনো ব্যক্তির লোকেশন বা ব্যক্তিগত তথ্য জানাতে সক্ষম নয়। আপনি যদি কাউকে ট্র্যাক করতে চান বা ব্যক্তিগত কোনো ডেটা জানতে চান, সেটা একটি গোপনীয়তা লঙ্ঘনের চেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হবে।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অশ্লীল বা যৌন বিষয়ক অনুচিত প্রশ্ন। অনেক সময় মজা করতে গিয়ে কেউ কেউ এমন প্রশ্ন করে থাকে, কিন্তু চ্যাটজিপিটি এইসব প্রশ্নের উত্তর দেয় না এবং আপনার অ্যাক্সেস বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ধর্মীয় বা রাজনৈতিক বিদ্বেষমূলক প্রশ্ন করাও AI ব্যবহারের নীতিমালার বাইরে। আপনি চাইলে ধর্ম বা রাজনীতি নিয়ে সচেতন আলোচনা করতে পারেন, কিন্তু ঘৃণা ছড়ানো বা উস্কানিমূলক বক্তব্য চাওয়া একেবারেই অনুচিত।

সবশেষে, চ্যাটজিপিটিকে মানুষ হিসেবে আবেগপ্রবণ প্রশ্ন করা যেমন “তুমি কি আমার বন্ধু?”, “তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?” ইত্যাদি প্রশ্ন এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ, AI এর কোনো আবেগ নেই। এটি একটি প্রোগ্রাম মাত্র  মানুষের মতো অনুভব করতে বা সম্পর্ক গড়তে পারে না।

তবে এর মানে এই নয় যে, আপনি চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করবেন না। বরং, এটি ব্যবহার করবেন সচেতনভাবে। তথ্যভিত্তিক প্রশ্ন, লেখালেখির সহায়তা, শেখার উদ্দেশ্যে ব্যাখ্যা চাওয়া, প্রযুক্তি বা মার্কেটিং-সংক্রান্ত সহায়তা চাওয়া  এসব ক্ষেত্রে AI অত্যন্ত কার্যকর।

চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করার সময় মনে রাখবেন: এটি একটি সহায়ক টুল, কোনো অলৌকিক যন্ত্র নয়। সচেতনভাবে এবং দায়িত্ব নিয়ে এর ব্যবহার আপনার জীবন ও কাজকে আরও সহজ করে তুলবে, যদি আপনি সঠিক প্রশ্ন করেন।