বর্তমানে বিনোদনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ভিডিও। সময় কাটাতে হোক কিংবা তথ্য জানতে ফেসবুক ও ইউটিউব আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী। ইউটিউব, ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম সব প্ল্যাটফর্মই এখন ভিডিও নির্ভর।
তবে একটা ভিডিও দেখতে দেখতে হঠাৎ ডেটা শেষ হয়ে গেলে বিরক্তি লাগাটাই স্বাভাবিক। এ অবস্থায় মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে একটা প্রশ্ন বারবার ঘুরেফিরে আসে তা হলো ‘১ জিবি ডেটায় আসলে কতক্ষণ ভিডিও দেখা যায়?’
এই প্রশ্নের উত্তর সহজ হলেও, কিছুটা কারিগরি নির্ভর। কারণ, ভিডিও দেখার সময় ডেটা খরচ নির্ভর করে ভিডিওটির রেজোলিউশন বা কোয়ালিটির ওপর। কম মানের ভিডিও কম ডেটা খরচ করে, আর উচ্চ মানের ভিডিও বেশি।
প্রশ্নটা সহজ, কিন্তু উত্তরটা কিছুটা কারিগরি নির্ভর। কারণ ভিডিও দেখার সময় ডেটা খরচ মূলত নির্ভর করে ভিডিওর রেজোলিউশন বা কোয়ালিটির ওপর। কম মানের ভিডিও কম ডেটা নেয়, আবার উচ্চমানের ভিডিও গিলে নেয় বেশি এমবি।
এই প্রতিবেদনে আমরা আপনাদেরকে জানাবো ইউটিউব, ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রামে আপনি ১ জিবি ডেটায় কতক্ষণ ভিডিও দেখতে পারবেন, কোন রেজোলিউশনে কত খরচ হয়, আর কীভাবে ডেটা সাশ্রয় করবেন।
ইন্টারনেট ডেটা কী?
ইন্টারনেট ডেটা হলো ডিজিটাল তথ্যের এমন একটি রূপ, যা মোবাইল ফোন, কম্পিউটার বা অন্য ডিভাইস ইন্টারনেটে সংযুক্ত হয়ে আদান-প্রদান করে। আপনি যখন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। যেমন:
- ভিডিও দেখেন
- ফেসবুক স্ক্রল করেন
- গুগলে কিছু সার্চ করেন
- ছবি বা ফাইল ডাউনলোড করেন
ডেটার একক কী কী?
- ১ কিলোবাইট (KB) ১,০২৪ বাইট
- ১ মেগাবাইট (MB) ১,০২৪ কিলোবাইট
- ১ গিগাবাইট (GB) ১,০২৪ মেগাবাইট
- ১ টেরাবাইট (TB) ১,০২৪ গিগাবাইট
ইন্টারনেট ডেটা কীভাবে কাজ করে?
ইন্টারনেট ডেটা মূলত ডিজিটাল তথ্যের একটি রূপ, যা মোবাইল ফোন, কম্পিউটার বা অন্য কোনো ডিভাইসে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে আমরা গ্রহণ করি কিংবা পাঠিয়ে দিই। আপনি যখন ফেসবুকে স্ক্রল করেন, ইউটিউবে ভিডিও চালান বা গুগলে কিছু খোঁজেন, তখন আপনার ডিভাইস আসলে কোনো একটি সার্ভারের কাছে তথ্যের অনুরোধ পাঠায়। সেই সার্ভার আবার আপনাকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠিয়ে দেয়। এই পুরো প্রক্রিয়াতেই ব্যয় হয় ইন্টারনেট ডেটা।
এটা অনেকটা চিঠি লেখার মতো। আপনি যা জানতে চাচ্ছেন, সেটা লেখা চিঠি হিসেবে সার্ভারে পাঠালেন। সার্ভার সেই চিঠির উত্তর আবার আপনাকে পাঠিয়ে দিল। তবে চিঠির জায়গায় এখানে আছে ডিজিটাল সিগন্যাল, আর চিঠি আদান-প্রদানের পথে ব্যয় হচ্ছে ডেটা।
ইন্টারনেটে আপনি যত স্পষ্ট বা ভারী কনটেন্ট দেখবেন, যেমন এইচডি ভিডিও, লাইভ স্ট্রিমিং বা গেম খেলা,তত বেশি ডেটা ব্যবহার হবে। অন্যদিকে টেক্সট পড়া বা হালকা মানের ছবি দেখা তুলনামূলকভাবে কম ডেটা খরচ করে। তাই আপনি কীভাবে, কতক্ষণ ও কোন মানে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, তার ওপর নির্ভর করে আপনি কত ডেটা খরচ করবেন।
সংক্ষেপে বলা যায়, ইন্টারনেট ডেটা হলো আপনার অনলাইন কার্যকলাপের পেছনের অদৃশ্য জ্বালানি, যার মাধ্যমে আপনি দেখতে, জানতে, শেয়ার করতে বা যোগাযোগ করতে পারেন।
ডেটা খরচ হওয়া পরিমাণ
এক এক মাধ্যমে ডেটা খরচের পরিমাণ এক রকম হয় না। ভিডিওর গুণগত মান, দৈর্ঘ্য এবং প্ল্যাটফর্মভেদে ডেটার ব্যবহার ভিন্ন ভিন্ন হয়। তাই ভিডিও দেখতে গেলে যে পরিমাণ ডেটা খরচ হবে তা নির্ভর করে আপনি কোন অ্যাপে, কোন রেজোলিউশনে ভিডিও দেখছেন তার ওপর।
নিচে বিভিন্ন জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মে ভিডিও দেখার সময় ডেটা খরচের আনুমানিক পরিমাণ দেওয়া হলো, যা আপনাকে ডেটা ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করবে।
ইউটিউব (YouTube)
ইউটিউবে ভিডিওর গুণগত মান বা রেজোলিউশন যত বেশি হবে, ডেটা তত বেশি খরচ হবে। ১ জিবি ডেটায় আপনি প্রায় এই পরিমাণ সময় ভিডিও দেখতে পারবেন-
- খুবই কম মানের ভিডিও (১৪৪p) দেখতে পারবেন প্রায় ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা।
- মাঝারি মানের ভিডিও (২৪০p) দেখতে পারবেন ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা।
- ৩৬০p মানের ভিডিও দেখতে পারবেন ৪ ঘণ্টার মতো।
- ৪৮০p (এসডি) ভিডিও দেখতে পারবেন ২ থেকে ২.৫ ঘণ্টা।
- ৭২০p (এইচডি) ভিডিও দেখতে পারবেন প্রায় ১ থেকে ১.৫ ঘণ্টা।
- ফুল এইচডি (১০৮০p) ভিডিও দেখতে পারবেন ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা।
- ৪কে (উল্ট্রা এইচডি) ভিডিও দেখতে পারবেন মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট।
ফেসবুক (Facebook)
ফেসবুকে সাধারণ ব্রাউজিং এবং ভিডিও অটো-প্লে চালু থাকলে ডেটা একটু বেশি খরচ হয়। ১ জিবি ডেটায় ভিডিও দেখতে পারবেন-
- ব্রাউজিং এবং অটো-প্লে সহ ২ থেকে ৩ ঘণ্টা।
- ৩৬০p মানের ভিডিও ২ ঘণ্টা।
- ৪৮০p মানের ভিডিও ১.৫ ঘণ্টা।
- ৭২০p মানের ভিডিও ৪৫ থেকে ৬০ মিনিট।
মনে রাখবেন, ফেসবুকে অটো-প্লে চালু থাকলে বা ভিডিওর মাঝখানে বিজ্ঞাপন এলে ডেটার খরচ আরও বাড়ে।
টিকটক (TikTok)
টিকটকের ভিডিও ছোট হওয়ায় অনেক ভিডিও দেখলেও ডেটা দ্রুত শেষ হতে পারে। ১ জিবি ডেটায় আপনি দেখতে পারবেন-
- স্বাভাবিক মানের ভিডিও প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা।
- এইচডি মানের ভিডিও ১ থেকে ১.৫ ঘণ্টা।
ইনস্টাগ্রাম (Instagram)
- ইনস্টাগ্রামে ভিডিও, রিলস, স্টোরিজ এবং লাইভ স্ট্রিমের ভিডিও দেখতে পারবেন।
- রিলস (স্বয়ংক্রিয় মান) প্রায় ২ থেকে ২.৫ ঘণ্টা।
- স্টোরিজ, লাইভ ও আইজিটিভি ভিডিও ১ থেকে ১.৫ ঘণ্টা।
কম ডেটা খরচ করতে যা করতে পারেন
- ভিডিও দেখার সময় গুণগত মান (রেজোলিউশন) কমিয়ে নিন, যেমন ৩৬০p বা ৪৮০p।
- ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদির অটোপ্লে ফিচার বন্ধ রাখুন।
- যখন সম্ভব, ওয়াইফাই ব্যবহার করুন বিশেষ করে ভিডিও দেখার সময়।
- মোবাইল অ্যাপে ‘ডেটা সেভার’ বা ‘লো ডেটা মোড’ চালু করুন।
- অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের ব্যাকগ্রাউন্ড ডেটা বন্ধ করে দিন।
- ভিডিও বা গান অফলাইনে ডাউনলোড করে ব্যবহার করুন।
- মোবাইলের ডেটা ব্যবহার নিয়মিত মনিটর করুন, বেশি খরচ হয় এমন অ্যাপ চিহ্নিত করুন।
- ওয়েব ব্রাউজিংয়ের জন্য কমপ্রেসড ব্রাউজার ব্যবহার করতে পারেন, যেমন অপেরা মিনি বা গুগল ক্রোমের লাইট মোড।
- অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখুন।
- অজানা ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
আপনার ভিডিওর মান যত বেশি, ডেটা খরচ তত বেশি হয়, আর সময় কমে যায়। তাই, ডেটা সাশ্রয় করতে চাইলে মাঝারি বা কম রেজোলিউশনের ভিডিও দেখতে পারেন, এতে ১ জিবি ডেটায় বেশি সময় ভিডিও দেখতে পারবেন।
আপনার মতামত লিখুন :