ঢাকা মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

ট্রাইব্যুনালে হাজির না হলে সেনা কর্মকর্তাদের নামে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ০৮:৪৪ পিএম
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ছবি- সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ আমলের গুম মামলায় পরোয়ানাভুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের আগামীকাল (২২ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালে হাজির না হলে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।

প্রসিকিউটর তামিম বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তারা চাইলে স্বেচ্ছায় হাজির হতে পারেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও চাইলে তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে উপস্থাপন করতে পারে। হাজির হলে ট্রাইব্যুনাল চাইলে জামিন দিতে পারে, নতুবা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি তারা হাজির না হন, বা হাজির করা না যায়, তবে আগামীকাল ট্রাইব্যুনাল তাদের বিষয়ে দুটি জাতীয় দৈনিকে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেবে। সেখানে তাদের হাজির হওয়ার নতুন তারিখও নির্ধারণ করা হবে।’

তামিম জানান, প্রসিকিউশনের কাছে বর্তমানে গ্রেপ্তার সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। তবে ট্রাইব্যুনাল চাইলে পরবর্তী দিনে জানাতে পারে আসামিদের অবস্থান বা আইনি পদক্ষেপের অগ্রগতি সম্পর্কে।

এর আগে গত ৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালীন গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা দুটি মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার অভিযোগ আমলে নেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ মামলাগুলোর একটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩০ জন এবং অপরটিতে ১৩ জনকে আসামি করা হয়।

চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

প্রথম মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ, র‌্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলমসহ আরও ১৭ জনকে আসামি করা হয়।

অন্য মামলায় জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টার (জেআইসি)-এ গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৩ জন সেনা কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদের নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ডিজিএফআই মহাপরিচালক লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, সাইফুল আবেদিন, তাবরেজ শামস চৌধুরী, হামিদুল হক, সরওয়ার হোসেন, কবির আহাম্মদ প্রমুখ।

প্রসিকিউশন সূত্রে জানা যায়, এসব মামলায় চারজন সেনা কর্মকর্তা এখনও সক্রিয় চাকরিতে রয়েছেন। তবে সংশোধিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে তারা পদে থাকার যোগ্য নন বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলে শতাধিক মানুষ গুমের শিকার হন। অনেকে আজও নিখোঁজ, আবার কারও মরদেহ পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর একাধিক গোপন বন্দিশালা থেকে গুমের শিকার বহু ব্যক্তি মুক্তি পান, যাদের সাক্ষ্য ও অভিযোগের ভিত্তিতেই এই দুই মামলার তদন্ত ও অভিযোগ গঠন করা হয়।