বিরিয়ানি, শরবত, মিষ্টিসহ বাহারি সব রান্নায় বিশ্বের অন্যতম দামি মসলা হিসেবে যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে জাফরান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তো বটেই, বাংলাদেশেও গত কয়েক বছর ধরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে এই মসলার জনপ্রিয়তা।
জাফরান ব্যবহারের নিয়ম
জাফরান অনেক উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে জাফরান ব্যবহার করার সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি হলো জাফরানের কিছু অংশ পানিতে ভিজিয়ে রাখা। কিছুক্ষণ পরে, যখন এটি তার রং এবং গন্ধ ছেড়ে দেয়, তখন এই জাফরান জলটি দুধে, একটি থালাতে, একটি ফেসপ্যাকে ব্যবহার করা যায়।
ত্বকের যত্নে জাফরান
জাফরানে আছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, আয়রন, ভিটামিন সি’সহ প্রায় ১৫০টি উপাদান যা সহজেই শরীরের উপকারে আসে। এই মসলা দুধের সাথে মেশানো হলে তা হজমশক্তিকে উন্নত করে, ত্বকের রং ফর্সা করে, ত্বক উজ্জ্বল ও কোমল করে, চুলকে রাখে ঝলমলে, আবার ত্বকে বয়সের ছাপও প্রতিরোধ করে।
জাফরান সাবানের উপকারিতা
এটি কালো দাগের উপস্থিতি কমাতে সাহায্য করে। পিগম্যানটেশন এবং অমসৃণ ত্বকের স্বরকে আরও উজ্জ্বল করে। জাফরানের রয়েছে ক্রসিন এবং ক্রুসেটিনের মতো এন্টি অক্সিডেন্ট যা ত্বককে পরিবেশগত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এই সাবান ব্যবহার স্বাস্থ্যকর।
জাফরানের উপকারিতা
জাফরান ত্বকের জন্য উপকারী। জাফরানের কিছু থ্রেড (4-5 থ্রেড যথেষ্ট) ঠান্ডা দুধে কয়েক মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে, তারপর এটি একটি পরিষ্কার এবং শুকনো মুখে লাগাতে হবে, কিছুক্ষণ এটি রেখে দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। জাফরান ব্ল্যাকহেডস এবং বন্ধ খোলা ছিদ্র দূর করতেও সাহায্য করে।
জাফরান সাধারণত ব্যবহারের জন্য নিরাপদ, কিন্তু সঠিক উপায়ে ব্যবহার না করলে এটি কিছু সমস্যা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। জাফরান ওষুধ হিসাবে গ্রহণ করলে নিরাপদ হতে পারে; তবে কিছু সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন শুষ্ক মুখ, অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া, মাথাব্যথা, পেটের সমস্যা, বমি বমি ভাব, ইত্যাদি হতে পারে।
পুরুষের জন্য জাফরানের উপকারিতা
নিয়মিত জাফরান জল পান করলে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কারণ এটি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট উপাদান হিসেবে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, টানা এক মাস ৩০ মিলিগ্রাম জাফরান খেলে ইরেক্টাইল ফাংশন উন্নত হয়।
গর্ভাবস্থায় জাফরানের উপকারিতা
মুড সুইং ঠিক করে: গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে প্রথমেই আসে মুড স্যুইং। গর্ভবতী মহিলাদের মন মেজাজ হয় অনেকটা বর্ষার আকাশের মতো। এই রোদ ঝলমলে তো এই কালো মেঘে ঢাকা। কখনো তাদের মন খারাপ তো কখনো আবার হাসিখুশি। জাফরান নিয়মিত খেলে তা শরীরে সেরোটোনিন হরমোন সৃষ্টি করে। এই সেরোটোনিন হরমোন শরীরে রক্ত সঞ্চালন সঠিক করে মুড স্যুইংকে নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলে গর্ভবতীদের ইমোশনাল আপ ডাউন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
ভালো ঘুমের সহায়ক: এক গ্লাস দুধের সঙ্গে এক চিমটে জাফরান মিশিয়ে পান করলে তা গর্ভবতীদের ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। অনেক সময়ই গর্ভাবস্থায় মহিলাদের রাতে ঘুম ভালো হয় না। স্ফীত উদরের কারণে শারীরিক অস্বস্তি বোধ থেকে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয় অনেকের। কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত জরুরি। কেশর উদ্বেগ ও মানসিক অস্বস্তি কমায়, মন করে শান্ত। ফলে সহজেই ভালো ঘুম হয় গর্ভবতীদের।
ব্য়থা বেদনা সারায়: হবু মায়েদের শরীরে অনেক সময় নানা ধরনের ব্যথা বেদনা হয়। কোমরে ব্যথা, হাঁটুতে ক্র্যাম্প লেগেই থাকে। মূলত হরমোনের তারতম্যই এর কারণ। কখনো কখনো এই ব্যথা সহনশীল থাকলেও অনেক সময়ই তা চলে যায় সহ্যের বাইরে। গর্ভাবস্থার এই ব্যথা বেদনা নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে জাফরান। জাফরানের মধ্যে থাকা উপকরণ প্রাকৃতিক পেইন কিলার হিসেবে কাজ করে। মাসলকেও দেয় আরাম।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: গর্ভাবস্থায় অনেক সময় মহিলাদের রক্তচাপ বেড়ে যায়। কারণ এই সময় শরীরে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেশি থাকে। অল্প পরিমাণে জাফরান খেলে তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। হাই ব্লাড প্রেশার থেকে হাইপারটেনশন হয়, যা গর্ভাবস্থার অন্যতম সমস্যা। এর থেকে মুক্তি পেতে জাফরান সহায়ক হতে পারে।
হৃদযন্ত্র ভালো রাখে: গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলারই জাংক ফুডের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়। যার ফলে কোলেস্টরল বেড়ে গিয়ে হার্টের ক্ষতি করতে পারে। কোলেস্টরল লেভেল ঠিক রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে জাফরান। হবু মা ও তাঁর গর্ভস্থ শিশুর হার্ট ভালো রাখে জাফরান। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রাকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটি সহায়ক। এ ছাড়াও গর্ভাবস্থার নানা রকম অ্যালার্জি ও সংক্রমণ থেকে মুক্তি দিতেও বিশেষ ভূমিকা আছে জাফরানের।
জাফরানের অপকারিতা
১. গর্ভাবস্থায় কিছু মাস জাফরান ব্যবহার করা যাবে না, কারণ বেশি পরিমাণে জাফরান গ্রহণ করলে গর্ভপাত হতে পারে।
২. বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় জাফরান ব্যবহার করা যাবে না, কারণ এটি শিশু এবং মা উভয়ের জন্যই ক্ষতিকারক হতে পারে৷
৩. জাফরান মানুষের মেজাজকে প্রভাবিত করে এবং মানুষের মধ্যে উত্তেজনা এবং আবেগপ্রবণ আচরণকে ট্রিগার করতে পারে, বিশেষ করে যাদের বাইপোলার ডিসঅর্ডার রয়েছে। আবার জাফরান বেশি খেলেও হতে পারে সমস্যা।


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন