ঘুমানোর সময় নেই, রাত জেগে কাজ করতে হবে, অলসেরা ঘুমায়, সফলেরা জেগে থাকে; এমন নানা কথায় ঘুমকে আজকাল অনেকেই ‘অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা’ বলে মনে করেন। অথচ বিজ্ঞান বলছে ঘুম শুধু বিশ্রাম নয়, এটি শরীর ও মস্তিষ্কের রক্ষণাবেক্ষণের সময়। ৬ ঘণ্টার কম ঘুমালে শরীরে হতে পারে একাধিক ক্ষতি। আর এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন চলতে থাকলে এক সময়ে তা মানুষের আয়ুর ওপর প্রভাব ফেলে।
নিয়মিত কম ঘুমালে শরীরের ভেতরে ক্ষতি গড়ে ওঠে নিঃশব্দে, ধীরে ধীরে যার প্রভাব পড়ে দৈহিক, মানসিক, আবেগিক এমনকি সামাজিক জীবনেও।
প্রতিদিন কত ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন?
প্রতিদিন ঘুমের প্রয়োজনীয়তা বয়সভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট, তবে কিশোরদের ক্ষেত্রে এই সময়টা ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা হওয়া উচিত। ছোট শিশুদের বয়স অনুযায়ী দৈনিক ৯ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমের প্রয়োজন হতে পারে। যারা নিয়মিত এই প্রয়োজনীয় সময়ের কম ঘুমান, তাদের শরীর ও মস্তিষ্কে ধীরে ধীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দেয়।
ঘুম না হলে মস্তিষ্ক তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ করতে পারে না। মনে রাখার ক্ষমতা কমে যায়, মনোযোগ ছড়িয়ে পড়ে।
হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে
কম ঘুম হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে বিঘ্ন ঘটায়, যার ফলে হাই ব্লাড প্রেশার, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়
ঘুম আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। ঘুম না হলে সংক্রমণ প্রতিরোধ কমে যায়, বারবার অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
ওজন বেড়ে যায় ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে
ঘুম কম হলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন (লেপটিন ও ঘ্রেলিন) ভারসাম্য হারায়, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এতে ওজন বাড়ে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস হতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য অবনতি ঘটে
ডিপ্রেশন, উদ্বেগ, মুড সুইং, রাগ এবং হতাশা—সবকিছুর পেছনে অপর্যাপ্ত ঘুম একটি বড় কারণ।
চর্ম ও ত্বকের ক্ষতি হয়
চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল, ত্বকে ক্লান্ত ভাব, বার্ধক্যের ছাপ—ঘুমের ঘাটতিতে আরও ত্বরান্বিত হয়।
দ্রুত বার্ধক্যের দিকে ঠেলে দেয়
ঘুম কম হলে কোষ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, ফলে দেহের স্বাভাবিক বার্ধক্য প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়।
সমাধান কী
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো ও জাগা, ঘুমের আগে স্ক্রিন টাইম কমানো, শান্ত ও অন্ধকার ঘর ব্যবহার, ঘুমের আগে হালকা মেডিটেশন বা বই পড়া, রাতের খাবার হালকা রাখা, সন্ধ্যার পর ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা।